Sunday, December 22, 2024
Homeঅপরাধকলকাতায় উদ্ধার হওয়া মাংস-হাড়ের টুকরো এমপি আনারের : ডিএনএ রিপোর্ট

কলকাতায় উদ্ধার হওয়া মাংস-হাড়ের টুকরো এমপি আনারের : ডিএনএ রিপোর্ট

আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ কলকাতায় উদ্ধারকৃত খণ্ডবিখণ্ড লাশ, হাড়ের টুকরো নিহত ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের। আনার-কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের ডিএনএ পরীক্ষা করে এই তথ্য সামনে এসেছে। এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডি সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে। ওই মাংস এমপি আনারের কিনা, তা নিশ্চিত হতে গত নভেম্বর মাসে কলকাতায় এসে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছিলেন এমপি আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। পরে সেই নমুনা পাঠানো হয় ‘সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরী’তে।

সিআইডির এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ডিএনএ রিপোর্ট নিশ্চিত করেছে যে, খালের পাড় ও সমতল থেকে উদ্ধার হওয়া মাংস ও হাড়গুলো বাংলাদেশের এমপির। উল্লেখ্য, গত ১২ মে ভারতে যান সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার। তিনি পূর্ব পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের পশ্চিমবঙ্গের বরানগরে বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ১৩ মে চিকিৎসা করাতে যাবেন বলে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু ওইদিন রাতেই নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের বহুতল আবাসনের ‘বিইউ-৫৬’ ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে তাকে খুন করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীন বলে জানা যায়। মূলত আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদসহ ৪ জন সংসদকে ওই আবাসনে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এই ঘটনায় বাংলাদেশের ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডির হাতে গ্রেফতার হয় দুইজন।সিয়াম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি জানতে পারে, সংসদ সদস্যকে খুন ও খণ্ড বিখণ্ড লাশ লোপাটের কাজে যুক্ত ছিলেন তিনি। নিউটাউনের অভিজাত ওই সঞ্জীবা গার্ডেনের যে সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসে তাতেও সিয়ামকে দেখা যায়।

সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক অভিযুক্ত কসাই জিহাদ খুনের পরই ধারালো অস্ত্র দিয়ে এমপি আনারের শরীর থেকে মাংস আলাদা করে সেগুলোকে ক্যারিব্যাগে ভরে রাখে। পরে সেই লাশের টুকরো গুলোকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার ভাঙড় ব্লকের কৃষ্ণমাটি খাল এলাকায় ফেলা হয়। জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনটাই জানতে পারে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে ওই খাল সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু হাড় উদ্ধার করে সিআইডির কর্মকর্তারা। যা দেখে সিআইডি কর্মকর্তা ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান সেগুলি মানুষের হাড়।

পাশাপাশি সঞ্জীবা গার্ডেনের ওই আবাসনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় ৪ কেজি মাংস। উদ্ধারকৃত ওই মাংস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় ‘সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরী’ (CFSL)-এ। CFSL’এর প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী পুরুষ মানুষের। যদিও সেই খণ্ডবিখণ্ড লাশ এমপি আনারের কিনা, তা নিশ্চিত হতেই ডিএনএ পরীক্ষা জরুরি ছিল। সেক্ষেত্রে অনেক আগেই নিহত এমপি আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডোরিন কলকাতায় আসার কথা থাকলেও নানা কারণে তা পিছিয়ে যায়। অবশেষে গত নভেম্বর মাসেই কলকাতা এসে সিআইডি কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেন। এবং ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তদন্তকারী সংস্থা।

ওই মামলার তদন্ত করতে কলকাতা এসেছিল তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল। সঞ্জীবা গার্ডেন, বাগজোলা খালসহ বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনের পাশাপাশি দফায় দফায় সিআইডি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন ডিবি প্রধান। এদিকে গত ২৩ মে জিহাদ হাওলাদার এবং ৭ জুন  সিয়াম হোসেনকে গ্রেফতারের পর আগস্ট মাসে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত জেলা আদালতে প্রায় ১২০০ পাতার চার্জশিট জমা পড়ে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ), ৩০২ (অপরাধমূলক নর হত্যা), ২০১ (তথ্য প্রমাণ লোপাট) এবং ৩৪ (সংঘবদ্ধ ভাবে অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করা) এবং ১৪ ফরেনার্স আইনে মামলা দেওয়া হয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments