আলোর যুগ স্পোর্টসঃ চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ মানেই রিয়াল মাদ্রিদ অবিশ্বাস্য কিছু করবে এটা নিশ্চিত! তেমনই এক নজির দেখা গেলো আজ। চাপ সামলে ঘুরে দাঁড়িয়ে আরও এক অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে গল্প লিখেছে তারা। সামনে থেকে যার নেতৃত্ব দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দিবাগত রাতে নিজেদের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ৫-২ গোলের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ভিনি-রদ্রিরা। দলের হয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র।
ফেভারিট হিসেবে ঘরের মাঠে নামলেও শুরুটা একদম বাজে হয় রিয়ালের। প্রথমার্ধে তেমন জোরালো আক্রমণ করতেই পারেনি রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন দলটি। উল্টো নিজেদের ভুলে ৩৪ মিনিটের মধ্যে দুই গোল হজম করে তারা। এতে করে প্রথমার্ধে তারা ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায়। বিরতি থেকে ফিরে গোল পরিশোধে মরিয়া হয়ে ওঠে লসব্লাঙ্কোরা। তবুও ম্যাচের ৬০ মিনিট পর্যন্ত দুই গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে থাকতে হয়েছিল কার্লো আনচেলত্তির দলকে। এরপরই শুরু হয় তাদের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন।
ম্যাচের শেষ ৩০ মিনিট এবং অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে ৩৩ মিনিটের মধ্যে বরুশিয়ার জালে গুনে গুনে পাঁচ গোল দেয় রিয়াল। ম্যাচে অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়ে হ্যাটট্রিক করেন রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। হয়েছেন ম্যাচ সেরাও।
ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে প্রথমবার বল জালে জড়ানোর সুযোগ পায় বরুশিয়া। তবে সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি অতিথিরা। পরের কয়েক মিনিটে খানিকটা চাপ সৃষ্টি করে রিয়াল। তবে কয়েকবার গোলে শট নিয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি ভিনিসিয়ুস জুনিয়র-কিলিয়ান এমবাপ্পেরা। সময় বাড়তে থাকলে খেলার গতি কমে। এই সময় নিজেদের ভুলে প্রথম গোল হজম করে রিয়াল।
ম্যাচের ৩০ মিনিটে বক্সের বাইরে বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন লুকাস ভাসকেজ। বলের দখল নিয়ে সতীর্থ ডোনিয়েল মালেনকে পাস দেন তিনি। জোরালো শটে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন ডাচ ফরোয়ার্ড। পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই চার মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয় গোল হজম করে রিয়াল। এই গোলেও তাদের রক্ষণের দুর্বলতা ফুটে ওঠে। বক্সে এদুয়াঁ মঁদিকে কাটিয়ে ডান দিক থেকে মালেন পাস বাড়ান বাঁ দিকে, সেখানে দুই ডিফেন্ডার ভাসকেজ ও এডার মিলিতাওয়ের মাঝ দিয়ে চোখের পলকে ছুটে গিয়ে গোল করেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড জেমি গিটেনস।
দুই গোল খেয়ে যেন হুঁশ ফেরে রিয়ালের। হারিয়ে ফেলা গতিও ফিরে পায়। তবে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা মিলছিল না। আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে চলতে থাকে প্রথমার্ধ। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা মিলছিল না রিয়ালের। তাই ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় তারা।
বিরতির পর আক্রমণে আরও জোর দেয় রিয়াল। আর ডর্টমুন্ড ঘর সামলানোতে মনোযোগ দেয়। এতে স্বাগতিকরা একের পর এক আক্রমণ করলেও তেমন সুবিধা করতে পারছিল না। কয়েক দফায় সুযোগ তৈরি করেও দুর্বল শট নেন ভিনিসিয়ুস। চাপ ধরে রাখার ফল ধরা দেয় ৬০তম মিনিটে। শুরু থেকে বিবর্ণ থাকা সেন্টার-ফরোয়ার্ড এমবাপ্পের দারুণ ক্রস খুঁজে পায় ছয় গজ বক্সে রুডিগারকে, লাফিয়ে হেডে গোল করে ব্যবধান কমান জার্মান ডিফেন্ডার। এর দুই মিনিট পর ম্যাচে সমতায় ফিরে গ্যালাকটিকোরা। মদ্রিচের পাস বক্সের মুখে ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি এমবাপ্পে, সেই সুযোগে স্লাইডে শট নেন এক ডিফেন্ডার, কিন্তু বল চলে যায় ভিনিসিয়ুসের পায়ে। অনায়াসে ফাঁকা জালে বল পাঠান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
প্রবল চাপের মাঝেই ৮২তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত বরুশিয়া। কিন্তু ফাঁকায় বল পেয়েও দুর্বল শটের কারণে গোল করতে ব্যর্থ হন মাক্সিমিলিয়ান। ওখান থেকে পাল্টা আক্রমণে প্রতিপক্ষের ছোট্ট এক ভুলের সুযোগে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ভাসকেজ ডান দিক থেকে পাস দেয়ার চেষ্টা করলে বরুশিয়ার একজন ঠেকিয়ে দেন, কিন্তু বল পুনরায় চলে যায় ভাসকেজের কাছে। এরপর ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে দুরূহ কোণ থেকে জোরাল শটে বরুশিয়া গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন স্প্যানিশ তারকা।
৮৬তম মিনিটে অবিশ্বাস্য গোলে জয় প্রায় নিশ্চিত করেন ভিনিসিয়ুস। নিজেদের বক্সের পাশ থেকে বল ধরে প্রথমে ধীরে, পরে ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে বক্সের বাইরে থেকে তার নেয়া জোরাল শট বরুশিয়ার জালে স্পর্শ কতেই পুরো বার্নাব্যু উল্লাসে ফেটে পড়ে। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে একক নৈপুণ্যে আরেকটি চমৎকার গোলে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ভিনিসিযুস। প্রতিপক্ষের একটু ভুলে বল ধরে বক্সে ঢুকে একজনকে কাটিয়ে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন তিনি। সব শঙ্কা দূরে ঠেলে বড় জয়ের আনন্দে মাঠ ছাড়ে রিয়াল।