আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ অব্যাহতভাবে ইসরায়েলি হামলা ও আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে ইরান থেকে মঙ্গলবার রাতে দেশটির ওপর প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ভয়াবহ যুদ্ধ তৎপরতা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন এ যুদ্ধ বিশ্ব বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ইসরায়েল যে কোনো মুহূর্তে ইরানের ওপর পাল্টা আঘাতের ঘোষণা দিয়েছে। ইরানও বলেছে, ইসরায়েলকে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে পরিণত করা হবে।
মিত্র ইসরায়েলকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্ররা উপসাগরে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করছে। সর্বাত্মক যুদ্ধাবস্থার মুখে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এবং দেশটির মানুষ বেশির ভাগ সময় মাটির নিচে বাংকারে অবস্থান করছেন। প্রায় সময় ধরেই দেশটিতে যুদ্ধ সময়ের সাইরেন বাজানো হচ্ছে। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা।
ইরানি হামলার পর গতকাল তেলআবিব দাবি করেছে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অকার্যকর করে দিতে ইসরায়েলের বিমান ঘাঁটি ও রাডার সিস্টেমগুলোকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। তারা ইসরায়েলের বিমানবন্দর ও ডিমোনা এলাকার পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রের মতো স্পর্শকাতর কৌশলগত স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তবে এসব ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকাংশকে আকাশেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ইসরায়েল আরও দাবি করেছে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) মধ্যে নিবিড় সমন্বয়েই ইরানের হামলা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়। এ হামলায় অল্প কয়েকজন আহত হওয়া ছাড়া বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এ বিষয়ে ইসরায়েলের বহুদর্শী যুদ্ধ সাংবাদিক রন বেন-ইশাই ওয়াইনেট নিউজে এক মতামত কলামে লিখেছেন, ‘প্রায় এক টন ওজনের বোমাযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে কৌশলগত স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করার পাশাপাশি ইসরায়েলজুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে ইরান।’
অন্যদিকে সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেছেন, ‘আমাদের পদক্ষেপ আপাতত শেষ হয়েছে, যদি না ইসরায়েলি শাসক আরও প্রতিশোধের আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের জবাব আরও জোরালো ও শক্তিশালী হবে।’ দেশটির সামরিক সূত্র বলেছে, ‘পাল্টা যে কোনো হামলা হলে ইসরায়েলকে নরককুন্ডে পরিণত করা হবে।’ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ইরানের সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি বলেন, ‘ইসরায়েল যদি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নিতে চায়, তাহলে এবার ইসরায়েলজুড়ে সব স্থাপনায় হামলা চালানো হবে।’
অপরদিকে ইরানি হামলার পর ইসরায়েলে জরুরি অবস্থা জারি করে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, ‘ইরান রাতে বড় ভুল করে ফেলেছে। এ জন্য দেশটিকে চড়া মূল্য দিতে হবে। তারা আমাদের দৃঢ়সংকল্প এবং সামর্থ্যরে বিষয়টি বুঝতে পারেনি।’
এ ছাড়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগেরি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ‘আজ রাতেই’ শক্তিশালী হামলা চালানো হবে। হ্যাগেরি বলেন, ‘(ইসরায়েলের) বিমানবাহিনী তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। রাতেই মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী হামলা চালাবে। গত বছরজুড়েই এ অঞ্চলে এমন হামলা চালানো হচ্ছে।’ তিনি মঙ্গলবার রাতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এসব পাল্টাপাল্টি বিবৃতি ও হুমকি-ধমকির কারণে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বড় ধরনের যুদ্ধের সূচনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠেছে।
পেন্টাগনের আশ্বাস : মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ‘তৈরি অবস্থায়’ আছে যুক্তরাষ্ট্র। পেন্টাগন জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে ফোনালাপে এ কথা বলেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। পেন্টাগন তাদের এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ইরান ও ইরান সমর্থিত সন্ত্রাসী সংগঠনের হুমকি থেকে মার্কিন সেনা, মিত্র ও অংশীদারদের রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র তৈরি আছে বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।’ খবরে বলা হয়, ইসরায়েলকে রক্ষায় উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সামরিক শক্তি আরও বাড়াচ্ছে।
ইরানি হামলার জের : মঙ্গলবার রাতে হামলা শুরুর প্রায় ৪৫ মিনিট পর ইসরায়েলজুড়ে বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইরানের এ হামলাকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সামরিক ধাক্কা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। হামলার সময় পুরো ইসরায়েলজুড়ে সতর্কতামূলক সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে। দেশটির সব মানুষকে বোম্ব শেল্টারে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কর্মকর্তাসহ জনসাধারণ মাটির নিচে বোম্ব শেল্টারেই অবস্থান করছেন।
বৈরুতে হামলা : গতকাল ভোররাতে লেবাননের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর দক্ষিণ বৈরুতের অবস্থানগুলোতে ফের বোমা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েল জানিয়েছে, গোষ্ঠীটির লক্ষ্যস্থলগুলোতে অন্তত একডজন বিমান হামলা চালানো হয়েছে। খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের হামলার পর বৈরুতের দক্ষিণাংশের এলাকাগুলো থেকে বড় ধরনের ধোঁয়ার কু ুলি উঠতে দেখা গেছে। বাসিন্দাদের ওই সব এলাকা ছেড়ে চলে যেতে নতুন করে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের জন্য আকাশসীমা খুলে দিয়েছে সৌদি আরব: ইয়েমেনে সাম্প্রতিক হামলার সময় ইসরায়েল সৌদি আরবের আকাশসীমা ব্যবহার করেছে। গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারকারীরা জানান, ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের জন্য নিজের আকাশসীমা খুলে দিয়েছে সৌদি আরব।
রাতে ইরানি হামলার পর সকাল থেকে হিজবুল্লাহ ও হুতিদের হামলা শুরু: আগের রাতে ইসরায়েলের ওপর ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামালার পর গতকাল সকাল থেকে একযোগে ইসরায়েলের ওপর হামলা শুরু করেছে লেবাননের সশস্ত্র হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, এই হামলায় বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়াসহ বিভিন্ন স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।