Wednesday, October 30, 2024
Homeজেলার খবরতিস্তার পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই, খুলে দেওয়া হলো ৪৪ জলকপাট

তিস্তার পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই, খুলে দেওয়া হলো ৪৪ জলকপাট

আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ তিস্তার জন্মলগ্ন থেকে খনন না করায় পলি পড়ে ভরাট হয়েছে নদীর তলদেশ। ফলে পানি প্রবাহের পথ না পেয়ে বর্ষাকালে উজানের ঢেউয়ে লালমনিরহাটসহ পাঁচ জেলায় দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। এ সময় নদী ভাঙনও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এরই মধ্যে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।

প্রতি বছরই নদী পরিবর্তন করছে তার গতিপথ। বর্ষায় ভয়াবহ বন্যায় কিছুটা পানি নেমে যাওয়ার পরপরই তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে নদী পাড়ের মানুষ। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতেই নদীর দুই তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এক একটি পরিবার ৮-১০ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে সরিয়ে নিয়েছেন বসতভিটা। কেউ কেউ রাস্তার ধারে বা বাঁধের পাশে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ সেন্টিমিটার। বর্তমানে যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে গতকাল শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সারাদিন বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানির প্রবাহিত রের্কড করা হয়েছিল। ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পানির চাপ মোকাবিলায় ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, উজানের ঢলে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানির চাপ সামলাতে ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যার আশঙ্কা আছে। তবে বৃষ্টি কমলে তিস্তার পানি কমে যাবে। তাই তিস্তা পাড়ের মানুষের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই বলেও জানান তিনি।

এদিকে, গত জুন মাস থেকে তিস্তায় পানি বাড়ায় আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলেন জেলার পাঁচ হাজার মানুষ। তবে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে কখনো যায়নি। হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অনেক উঠতি ফসল ঘরে তুলতে পারেননি চরাঞ্চলের কৃষকরা। পরে সন্ধ্যায় জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণ করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। এছাড়াও আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচার কয়েকটি স্থানে পানি ঢুকে পড়েছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটির বাসিন্দা কৃষক মশিয়ার রহমান (৪০) বলেন, গত দুইদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। চরের ধান তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে রাতেই নদী তীরবর্তী বাড়িঘরে পানি ঢুকতে পারে। একই এলাকার নদী তীরবর্তী বাসিন্দা মজিবর রহমান (৫২) বলেন, গত দুইদিন ধরে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানির ভয়ঙ্কর শব্দে রাতের ঘুম হারিয়ে যায়। গতরাতে তার প্রতিবেশীর বাড়ির একটি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানন তিনি।

লালমনিরহাটের তিস্তা, ধরলা, স্বর্নামতিসহ বিভিন্ন নদ-নদীর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার রায় জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে রংপুর বিভাগের তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি গত দুইদিনে সমতল বৃদ্ধি পেয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে তিনি জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ২৪ ঘন্টায় অতি ভারী বৃষ্টিপাতের (৮৯ মি.মি.) সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পরবর্তী ২ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে। এর প্রেক্ষিতে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে পরবর্তী একদিন পর্যন্ত তা স্থিতিশীল এবং এর পরদিন থেকে তা হ্রাস পেতে পারে। এই অবস্থায় আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলার তিস্তা নদীর পানি সমতল সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে এবং জেলার নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ছাড়াও কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments