Saturday, November 23, 2024
Homeজাতীয়হাজার কোটি টাকা পাচার: সালমানসহ ২৮ জনের নামে সিআইডির মামলা

হাজার কোটি টাকা পাচার: সালমানসহ ২৮ জনের নামে সিআইডির মামলা

আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় এক হাজার কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার এবং পতন হওয়া সরকারের প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বুধবার সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও বিধি মোতাবেক পরিচালিত সিআইডির অনুসন্ধানে সালমান এফ রহমান (বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান) এবং তার ভাই এ এস এফ রহমান (বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান) এর স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকানাধীন মোট ১৭টি প্রতিষ্ঠান ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে জনতা ব্যাংক পিএলসি লোকাল অফিস শাখা, দিলকুশা, মতিঝিল থেকে ৯৩টি এলসি/সেলস কন্ট্রাক্ট (বিক্রয় চুক্তি) গ্রহণপূর্বক এর বিপরীতে পণ্য রপ্তানি করে নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও রপ্তানিমূল্য প্রায় ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০০০ কোটি টাকা) বাংলাদেশে না এনে বিদেশে পাচার করে, যার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

সিআইডির কর্মকর্তা আজাদ রহমান জানান, অনুসন্ধানে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১. অ্যাডভেঞ্চার গার্মেন্টস লিমিটেড, ২. অ্যাপোলো অ্যাপারেলস লিমিটেড, ৩. অটাম লুপ অ্যাপারেলস লিমিটেড, ৪. বেক্সটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেড, ৫. কসমোপলিটান অ্যাপারেলস লিমিটেড, ৬. কোজি অ্যাপারেলস লিমিটেড, ৭. এসেস ফ্যাশন লিমিটেড, ৮. ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেড, ৯. কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেড, ১০. মিডওয়েস্ট গার্মেন্টস লিমিটেড, ১১. পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেড, ১২. পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টস লিমিটেড, ১৩. প্ল্যাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেড, ১৪. স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেড, ১৫. স্প্রিংফুল অ্যাপারেলস লিমিটেড, ১৬. আরবান ফ্যাশনস লিমিটেড ও ১৭. উইন্টার স্প্রিন্ট গার্মেন্টস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে প্রায় ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে।

বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পণ্য রপ্তানি করার পর রপ্তানিমূল্য চার মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন করার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও যথাসময়ে রপ্তানি মূল্য বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন না করে সালমান এফ রহমানসহ বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যান্য স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওই অর্থ বিদেশে পাচার করার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও জানান, বিদেশে রপ্তানি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ পণ্যই বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমানের পুত্র আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং এ এস এফ রহমানের পুত্র আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের যৌথ মালিকানাধীন আরআর গ্লোবাল ট্রেডিং (FZE) এর শারজাহ (আরব আমিরাত) এবং সৌদি আরবের ঠিকানায় রপ্তানি করা হয়েছে।

এছাড়া জার্মানি, নেদারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশেও পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে রপ্তানি মূল্য বাংলাদেশে না এনে আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশে বিদেশে পাচার করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে সিআইডি। সিআইডির এ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বিদেশে টাকা পাচারের অসদুদ্দেশ্যে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পণ্য রপ্তানি করে ইচ্ছাকৃতভাবে রপ্তানিমূল্য প্রত্যাবাসন না করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২(শ) এর (১৪) ও (২৬) ধারায় সম্পৃক্ত অপরাধ করেন, যা একই আইনের ৪(২)/৪(৪) ধারা মোতাবেক দণ্ডণীয় অপরাধ।

বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান এবং তার সহযোগীরা তাদের ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সহযোগিতায় বিদেশে অর্থপাচার করেছেন বলে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হওয়ায় সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট মতিঝিল থানায় ১৭টি মামলা দায়ের করেছে। এছাড়া সালমান এফ রহমান এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ও বেনামে প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের পর বিদেশে পাচার এবং অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে পৃথক অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সিআইডি ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments