Thursday, September 19, 2024
Homeআন্তর্জাতিকইয়ামিন হত্যাকাণ্ডে অবশেষে মামলা নিলো সাভার থানা, আসামি হাসিনা সহ ১৯৭

ইয়ামিন হত্যাকাণ্ডে অবশেষে মামলা নিলো সাভার থানা, আসামি হাসিনা সহ ১৯৭

ইয়ামিন হত্যাকাণ্ডে অবশেষে মামলা নিলো সাভার থানা, আসামি হাসিনা সহ ১৯৭

ইয়ামিন হত্যাকাণ্ডে অবশেষে মামলা নিলো সাভার থানা, আসামি হাসিনাসহ ১৯৭

সাভারে গুলি করে এমআইএসটির শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে হত্যার ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ১৯৭ জনের বিরুদ্ধে অবশেষে হত্যা মামলা নিয়েছে সাভার থানা মডেল থানা পুলিশ।

সোমবার দুপুরে নিহতের মামা আব্দুল্লাহ আল কাবির বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৩/৪৯৫।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে একই উদ্দেশ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হুকুমে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এদিন বিকেলে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার ওসি আতিকুর রহমান।

শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাসহ হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সাভার থানায় দায়ের করা এটিই প্রথম হত্যা মামলা।

নিহত শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন এমআইএসটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই দুপুরে প্রথম শহিদ হন তিনি।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা পয়েন্টে আন্দোলনরত এমআইএসটির শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে খুব কাছ থেকে গুলি চালায় পুলিশ। গুলিবিদ্ধ ইয়ামিনকে সাঁজায়ো যানে করে ঘোরানোর পর ফেলে দেওয়া হয় সড়কে। এক পর্যায়ে পুলিশের দুই সদস্য বস্তা ফেলার মতো চ্যাংদোলা করে এক লেন থেকে সড়কের অন্য লেনে ফেলে দেন ইয়ামিনকে।

সেই ভিডিও পরে ভাইরাল হলে তা নজর কাড়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের।

ইউনিট কমান্ডার হিসেবে এ ঘটনায় নিজে নেতৃত্ব দিয়ে এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে গুলি চালানোর হুকুম দিয়েছিলেন পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পাওয়া ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতির ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত ২৯ ব্যাচের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল কাফির বাড়ি সিরাজগঞ্জে।

তার নেতৃত্বেই ছাত্র জনতার মিছিলে গুলি চালানো হয়। পুলিশ সদর দপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির কাছেও এমন তথ্য জানিয়েছেন সে সময় দায়িত্বে থাকা পুলিশের জুনিয়র কর্মকর্তারা।

ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, সাজোঁয়া যানের ওপর থেকে ইয়ামিনকে ফেলে দেওয়া হলো। দরজা খুলে সাজোয়া যানের ভেতর থেকে বের বের হয়ে আসেন এক পুলিশ সদস্য। পরে আরেকজন বেরিয়ে এসে তাকে সহযোগিতা করেন। কোনোরকম চ্যাংদোলা করে শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে টেনে হিঁচড়ে সড়কের এক পাশে নিয়ে ফেলে দেন অন্য লেনে।

ভিডিও চিত্রে আরও দেখা যায়, তখনো নড়াচড়া করছে ইয়ামিনের দেহ। ভাইরাল হওয়া ভিডিও ক্লিপে এমন দৃশ্যে স্তম্ভিত হয়ে যান অনেকে। ওই ভিডিও ক্লিপে পুলিশের সাঁজোয়া যানের পেছনে সশস্ত্র অবস্থা দেখা যায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতা কর্মীকেও‌।

১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাভারে পুলিশের গুলিতে মারা যান কমপক্ষে ৭৫ জন। গুলিবিদ্ধ হন চার শতাধিক। এদের মধ্যে অসংখ্য মানুষ চিরতরের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, অন্ধ হয়েছেন অনেকে।

মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও অয় আসামিরা হলেন সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ আব্দুল্লাহিল কাফি, সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম, সাভার মডেল থানার সামনে ওসি শাহ জামান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুদীপ কুমার গোপ, আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হারুন অর রশিদ এবং এসআই সাব্বির আহাম্মেদ।

এছাড়াও এ মামলায় আসামির তালিকায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন- সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজিব, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর, তার মামা কুটি মোল্লা, ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সাভার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্পাদক ও ভাকুর্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের কথিত ভাগ্নে, রাজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন ওরফে ট্যাপা জাকির, সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, সহ-সভাপতি নিজামউদ্দিন টিপু সাভার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজাহারুল ইসলাম রুবেল, সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল গনি, তার ছেলে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন, কামরুল হাসান শাহীন, মেহেদী হাসান তুষার, আওয়ামী লীগ নেতা ও বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সুজন, সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম রাজীবের কথিত একান্ত সহকারী মো. রাজু, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাসুদ চৌধুরী, সাভার পৌর সভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরে আলম নিউটন, ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লা, ব্যাংক কলোনি ছাপড়া মসজিদ এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে রাজীব মাহমুদ, তার ভাই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আহাম্মেদ রুবেল, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ও বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম মন্ডল, ঢাকা জেলা যুবলীগের আহবায়ক মিজানুর রহমান মিজান ওরফে জি এস মিজান, সাভার পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির আহমেদ লিটন, নাছির উদ্দিন লিটন, তার ভাগ্নে সাভার কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইয়াকিন ইয়াছার ইয়াকিন ইয়াসার, সাভার পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান অভি, যুবলীগ নেতা ফয়সাল নাইম তুর্যসহ ৪৭ জন। এ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৮ জুলাই শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে গুলি করে হত্যার পর মুমূর্ষু অবস্থায় পুলিশের সাঁজোয়া যানে করে ঘোরানো হয় এবং সড়কে ফেলে দেবার নিষ্ঠুর চিত্র আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় গুরুত্ব দিয়ে প্রচারিত হয়।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে এ মামলা করেন নিহতের মামা আব্দুল্লাহ আল কাবির। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে সাভার থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। বাদীপক্ষে মামলা দায়ের করেন অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান মারুফ ও সাকিল আহমাদ।

আদেশের ৭ দিনের মাথায় মামলাটি গ্রহণ করল সাভার মডেল থানা পুলিশ।

শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল গনিসহ ৬৮ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments