আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি এলাকায় ছাত্র আন্দোলনে মাসুম মিয়া (২০) নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগে কুমিল্লা-৬ সদর আসনের সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে সিটি মেয়র তাহ্সীন বাহার সূচনাসহ ৬২ জনের নামোল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় আরো অন্তত ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। রবিবার সদর দক্ষিণ মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন নগরীর দিশাবন্দ এলাকার মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে আবদুল হান্নান। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মো. আলমগীর ভুঁইয়া।
সূত্র জানায়, গত ৪ আগস্ট কুমিল্লা নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর রামপুরের শাহিন মিয়ার ছেলে মাসুম মিয়া কুমিল্লার সদর দক্ষিণ থানার কোটবাড়ি বিশ্বরোডস্থ নন্দনপুরে শিক্ষার্থী ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষে নিহত হন। প্রথমে তার পরিচয় না পাওয়ায় বেওয়ারিস হিসেবে দাফন করা হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাশ দেখে স্বজনরা মরদেহ শনাক্ত করেন। মামলায় আসামিদের সবাই সাবেক এমপি বাহারের ঘনিষ্ঠ এবং তার নিয়ন্ত্রিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা।
মামলায় একনম্বর আসামি করা হয়েছে কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বাহারকে। দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে, তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের পলাতক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনাকে। এছাড়া কুমিল্লা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, কুমিল্লা সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আহম্মেদ নিয়াজ পাভেল, কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টু, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান পিয়াস, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হাবিবুর আল আমিন সাদী, ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর মেয়র সূচনার স্বামী সাইফুল আলম রনি, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর সরকার মাহমুদ জাবেদ, কুমিল্লা বাগিচাগাঁওয়ের কাউসার জামান কায়েস, তালপুকুর পাড়ের সুজন দত্ত, কালিয়াজুরির মুরাদ মিয়া, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আজাদ হোসেন, কাউন্সিলার আনোয়ার হোসেন, কাউন্সিলর ইকরামুল হক, রেইসকোর্সের আবদুল কাইয়ূম, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আবুল হাসান, সাবেক কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান মাসুদ, কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক শিহানুক, কুমিল্লা মধ্যম আশ্রাফপুরের নাজমুল ইসলাম শাওন, ছাত্রলীগ নেতা সালেহ আহম্মেদ রাসেল, কুমিল্লার অশোকতলার সাবেক কাউন্সিলর শাহ আলম খান, শাসনগাছার আবু হেনা, সাক্কু, ধর্মপুরের শহীদুল ইসলাম চপল, ফখরুল ইসলাম রুবেল, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর গাজী গোলাম সরওয়ার শিপন, কুমিল্লার সদর দক্ষিণের শ্রীমন্তপুরের দুলাল হোসেন অপু, নেউয়ারার জাকির হোসেন, পাথুরিয়াপাড়ার প্রিতুল, শাকতলা মীর পুকুর পাড়ের রবিন, কালা মোস্তফা, অশোকতলার সাইফুল ইসলাম খোকন, শ্রীভল্লভপুরের মো: মেহেদী, পাঁচথুবির চেয়ারম্যান হাসান রাফি রাজু, শিমপুরের মনিরুজ্জামান মনির, ব্রাহ্মণপাড়ার ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান শরীফ, শিমপুরের নিতান্ত, শ্রীভল্লবপুরের আবদুল মালেক ভূঞা, মো: খাইরুল হাসান, মো: হানিফ দুলাল, ঢুলিপাড়ার রাশেদুজ্জামান রাশেদ, শাসনগাছার জালাল, দক্ষিণ বিজয়পুরের মো: জাফর আহাম্মদ শিপন ,মোস্তফাপুরের মুন্সীবাড়ির মো: হাসান, মনোহরপুরের মোখলেছুর রহমান, বাগিচাগাঁওয়ের শফিকুর রহমানের ছেলে বাপ্পি, দৌলতপুরের ছায়া বিতানের জালাল (পিচ্চি জালাল), কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ সোহেল, দক্ষিণ চর্থার কাউসার আহমেদ খন্দকার ও আকাশ, মুন্সেফবাড়ির ফরহাদ উল্লাহ, লক্ষীনগরের কবির হোসেন, দিশাবন্দের গোলাম মোস্তফা, দুলাল মিয়া, জিয়াউর রহমান, লক্ষীনগরের জালাল, সুজানগর চৌমুহনীর জালাল ও হানিফসহ অজ্ঞাত ৪ শ’ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৪ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা সদর দক্ষিণ মডেল থানাধীন নন্দনপুর সাকিনস্থ কোটবাড়ি বিশ্বরোড পাকা রাস্তার উপর শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিল। বিকাল চারটার ২০ মিনিটের দিকে ১ ও ২ নম্বর আসামি বাহাউদ্দিন বাহার ও তাহসীন বাহারের হুকুমে মাসুম মিয়াকে (২০) গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় আরো অনেকে আহত হয়।