আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার নিখোঁজের সঙ্গে জড়িত অন্যতম সন্দেহভাজন ফাইজুল ওরফে সিয়াম হাসানকে ছাড়াই নেপাল থেকে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধি দল। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দলটির আজ দেশে ফেরার কথা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাঞ্চল্যকর এ বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বক্তব্যকে পুঁজি করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এরপরই বেঁকে বসেছে নেপাল পুলিশ।
জানা গেছে, নেপালি পুলিশের হেফাজতে থাকা সিয়ামের সঙ্গে কয়েক দফায় কথা বলেছেন বাংলাদেশি পুলিশের সদস্যরা। কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হোটেল, যেখানে সিয়াম এবং আখতারুজ্জামান শাহিন অবস্থান করেছেন সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে আসামি শিলাস্তি রহমান গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জেল হোসেনের আদালতে তিনি জবানবন্দি দেন। তদারক কর্মকর্তারা জানান, শিলাস্তি রহমান তার মোবাইলে শাহিনের মোবাইল নম্বরটি ‘পিটার পার্কার’ নামে সেভ করেছিলেন। তিনি শাহিনের গার্লফ্রেন্ড ছিলেন। গত জানুয়ারি মাসেও শিলাস্তি ভারতে শাহীনের সফরসঙ্গী হন। সেই সফরে চেলসি চেরী ওরফে আরিয়া (২১) নামের আরেকজন যুবতীও ছিলেন।
সঞ্জীভা গার্ডেন্সের ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে রিসিভ করেন শিলাস্তি। এমপি আনারকে খুন করতে তিনি দেখেননি দাবি করলেও দোতলা এবং নিচতলায় ব্লিচিং পাউডারের গন্ধ তিনি পেয়েছেন। বাথরুমের কমোডে বারবার ফ্ল্যাশ করার শব্দ শুনেছেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গতকাল ১০ জন আসামির ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন। বলেছেন, এ সংক্রান্তে যেন, বিএফআইইউ-কে নির্দেশ দেন আদালত। আসামিরা হলেন, শিমুল ভুঁইয়া শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুইয়া ওরফে আমানুল্যা সাইদ (৫৬), তানভীর ভূঁইয়া (৩০), শিলাস্তি রহমান (২২), আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন (৫৩), মোঃ সিয়াম হোসেন (৩৩), মোস্তাফিজুর রহমান (৩৩), ফয়সাল আলী সাজি (৩৭), চেলসি চেরী ওরফে আরিয়া (২১), তাজ মোহামম্মদ খান ওরফে হাজী (৬০) এবং মোঃ জামাল হোসেন (৫২)। এমপি আনারকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে ভারতের কলকাতা নিয়ে যায় আসামিরা।
প্রাথমিক তদন্তে ও গ্রেফতারকৃত আসামিরা জানিয়েছে, ভিকটিমকে কলকাতার নিউটাউন এলাকার ভাড়াকৃত ফ্ল্যাটে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং প্রমাণ নষ্ট করার উদ্দেশ্যে ভিকটিমের লাশের হাড় ও মাংস আলাদা করে মাংসপিণ্ড টয়লেটের কমোডে ফেলে দেয়। হাড়গুলো গারবেজ-পলিতে ভরে ট্রলি ব্যাগে করে আশপাশের বর্জ্য খালে ফেলে দেয়া হয়। আসামিরা পরিকল্পনা করে যে, ভিকটিমকে কীভাবে অপহরণ করবে ও টাকা পয়সা আদায় করবে এবং টাকা-পয়সা নেওয়ার পর কিভাবে হত্যা তথা লাশ গুম করবে তার লোমহর্ষক বর্ণনা গ্রেফতারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্য পলাতক আসামিদের নাম- ঠিকানা সংগ্রহ তথা মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বর্তমানে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
মাথার খুলি ও হাড়ের খোঁজে বাগজোলা খালে ভারতীয় নৌবাহিনী : এমপি আনারের লাশের অংশের (মাথার খুলি ও হাড়) খোঁজে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙ্গড়ের কৃষ্ণমাটি বাগজোলা খালে তল্লাশি অভিযান চালায় ভারতীয় নৌবাহিনীর ডুবুরিরা। সঙ্গে ছিল কলকাতা পুলিশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা টিমের (ডিএমজি) সদস্যরা। খুনের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে চলে এ অভিযান। গতকাল দুই দফায় জিরানগাছা ও সাতুলিয়া এলাকায় বাগজোলা খালে ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। বিশাখাপত্তনাম থেকে আসা নৌবাহিনীর তিনজন ডুবুরির পাশাপাশি ছিলেন ডিএমজি সদস্যরা।
নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানির নিচে চলে অভিযান। যদিও নিহত এমপি আনারের লাশের অংশ বা কোনো হাড়গোড় উদ্ধার করা যায়নি। প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগরে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজিম আনার।
বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচ দিন পর গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজিম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এ সংসদ সদস্যের। গত ২২ মে খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীভা গার্ডেন্স নামে একটি আবাসিক ভবনে আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন। ঘরের ভিতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি লাশ। এ ঘটনায় ওই দিনেই ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।