আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সোমবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলের শহর রাফায় বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। প্রায় ৭ মাসের যুদ্ধে গাজার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ বাঁচাতে মিশর সীমান্তবর্তী শহর রাফায় আশ্রয় নিয়েছিল। ইসরায়েলি বাহিনী এবার সেখানেও হামলা শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে রাফা থেকে অন্য আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে মানুষ। কারণ, যেকোনো সময় সেখানে পূর্ণ মাত্রার অভিযান শুরু করতে পারে ইসরায়েল। দেশটি বেশ কয়েকদিন ধরে এ হুমকি দিয়ে আসছিল।
রাফায় ইসরায়েলের এই হামলা গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য মিশরে মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে যে আলোচনা চলছে তা ভেস্তে দিতে পারে। হামাস কর্মকর্তা ইজ্জাত আল-রাশিক এ কথাই বলেছেন। রাফায় হামলার কারণ হিসেবে ইসরায়েল বলেছে, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের কয়েক হাজার যোদ্ধা রাফায় আত্মগোপন করে আছে, তাই শহরটি দখল করা ছাড়া বিজয় অসম্ভব। যে কারণে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী রাফায় একটি ‘সীমিত পরিসরের’ অভিযানের অংশ হিসেবে বাসিন্দাদের শহর ছাড়তে বলেছে। তারা ফিলিস্তিনিদের রাফার পূর্বাংশের একটি ‘বর্ধিত মানবিক এলাকায়’ চলে যেতে বলেছে।
আরবী তে ফোনে বার্তা পাঠিয়ে, কল করে এবং আকাশ থেকে লিফলেট ফেলে ফিলিস্তিনিদের ১২ মাইল দীর্ঘ ও ‘বর্ধিত মানবিক এলাকায়’ চলে যেতে বলেছে ইসরায়েল। বসন্তের হিমশীতল বৃষ্টি আর আকাশ থেকে ফেলা বোমায় মারা যাওয়ার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই অনেক ফিলিস্তিনি পরিবার রাফা থেকে সরে যেতে শুরু করেছে। কেউ কেউ গাধা টানা গাড়িতে শিশুদের বসিয়ে ও মালপত্র রেখে নিজেরা পায়ে হেঁটে চলছে। কেউ কেউ পিক-আপে করে আবার কোনো কোনো পরিবার সবাই মিলে পায়ে হেঁটে পালানোর চেষ্টা করছে।
একটি চ্যাট অ্যাপে এমনই একজন ফিলিস্তিনি শরণার্থী আবু রাইদ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘ভারি বৃষ্টি হচ্ছে এবং আমরা জানি না কোথায় যাব। এই দিন একদিন আসবে সেটা ভেবে আমি ভয়ে থাকতাম। পরিবার নিয়ে কোথায় যাব সেটা এখন আমাকে খুঁজতে হচ্ছে।’ হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, রাফা খালি করে দেয়ার এই নির্দেশ অবশ্যই একটি বিপজ্জনক আগ্রাসন এবং এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন, পাশাপাশি এই দখলদারিত্বকে এই সন্ত্রাসবাদের দায়ভার বহন করতে হবে।’
রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের যোগ্য জবাব দেয়া হবে এবং সেখানে থাকা ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষা দিতে হামাস পুরোপুরি প্রস্তুত বলেও সশস্ত্র সংগঠনটি থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। কোনো নিরাপদ স্থানের কথা না বলে রাফা থেকে ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে সরে যেতে বলার ফলে গাজায় আরো ভয়াবহ মানবিক দুর্যোগ নেমে আসতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা অ্যাকশনএইড বলেছে, ‘যাওয়ার একটি নিরাপদ জায়গা না দেখিয়ে রাফার ১০ লাখের বেশি মানুষকে সরে যেতে বাধ্য কার শুধু বেআইনিই নয় বরং এটা বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনবে।’