আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সাধারণ মানুষকে অনাহারে রেখে গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল— এমন অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, গাজায় এখনো মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। খাদ্য, পানি ও ওষুধের ঘাটতিকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মানুষকে অনাহারে রেখে গণহত্যা চালাচ্ছে তারা।
সংস্থাটির সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস কালামার্ড বলেন, ইসরায়েল জীবনধারণের মৌলিক চাহিদাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করছে। এটি সরাসরি গণহত্যার একটি কৌশল। অ্যামনেস্টি জানায়, সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টায় বহু ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছেন— কেউ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে, কেউ আবার সাহায্যের খোঁজে রাস্তায় বেরিয়ে। তাদের মতে, ইসরায়েলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ মূলত একটি ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
গাজার পরিস্থিতি শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে বলে জানায় অ্যামনেস্টি। অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলার পর এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৬ শিশু অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছে। আরও বহু শিশু মারা গেছে এমন রোগে, যেগুলোর চিকিৎসা সম্ভব ছিল— যদি খাদ্য ও ওষুধ পাওয়া যেত।
প্রতিদিন গাজার বাইরে শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক অপেক্ষা করলেও ইসরায়েলের অনুমতি না থাকায় সেগুলো ভেতরে ঢুকতে পারছে না। এক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ৪ মাস বয়সী জিনান ইসকাফি নামের এক শিশুর মৃত্যুর তথ্য তুলে ধরেছে। দুধের অভাবে শিশুটি অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় মারা যায়। গাজা শহর ও খান ইউনিসে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশের শরীরে গুরুতর অপুষ্টির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
চিকিৎসকরাও নিজেরাই বাস্তুহারা এবং দুর্ভিক্ষের শিকার। তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরও অনেক শিশু বারবার অসুস্থ হয়ে ফিরছে, কারণ ক্যাম্পে অবস্থার অবনতি হচ্ছে। অ্যামনেস্টি আরও বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেবল ইসরায়েলের গণহত্যা থামাতে ব্যর্থ নয়, বরং তারা এই ধ্বংসযজ্ঞ চলতে দিচ্ছে।
সংস্থাটি জোর দাবি জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রতি সব ধরনের সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে হবে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং অপরাধে জড়িত ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।