আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ সিরিয়ার উপকূলীয় শহর লাতাকিয়া ও তার্তুসে নতুন সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ও আসাদপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুসহ ৭৪৫ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও সিএনএন এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও সংঘর্ষের প্রকৃত তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে।
জাতীয় ঐক্যের আহ্বান
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা দেশজুড়ে চলমান সহিংসতা নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। দামেস্কের একটি মসজিদে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় ঐক্য ও শান্তি বজায় রাখতে হবে। ইনশা আল্লাহ, আমরা একসঙ্গে এই দেশে বসবাস করব।’
তিনি আরও বলেন, আসাদ পতনের পর সিরিয়ার জন্য এটি প্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ। এসওএইচআরের তথ্য অনুযায়ী, লাতাকিয়া ও তার্তুসে সংঘর্ষে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর ১২৫ জন সদস্য এবং আসাদপন্থী ১৪৮ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। সংগঠনটি আরও জানায়, সিরিয়ায় আসাদ শাসনের পতনের পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ।
আলাওয়ি সংখ্যালঘুরা আতঙ্কে
আলাওয়ি সম্প্রদায়ের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বসবাস করে আসছে। একসময় আসাদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই এলাকাগুলোতে এখন সহিংসতা চরমে পৌঁছেছে। সুন্নি ইসলামপন্থী সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাহিনী এখনো তাদের দমন নীতিতে অটল। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সংঘর্ষের কারণে হাজারো আলাওয়ি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। অনেকেই রাশিয়ার লাতাকিয়ায় অবস্থিত হেমেইমিম সামরিক ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে অবস্থানকারীদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে, ‘আমরা রাশিয়ার সুরক্ষা চাই।’
মানবাধিকার সংস্থা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পর গোষ্ঠীগত সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। এসওএইচআরের প্রধান রামি আবদুর রহমান বলেন, ‘এটি শুধু আসাদপন্থীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়; বরং এটি একটি সাম্প্রদায়িক সংঘাত, যা আলাওয়ি সম্প্রদায়কে উৎখাত করার চেষ্টা করছে।’
এদিকে, সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা-কে জানিয়েছেন, ‘বিশ্বাসঘাতক হামলার’ পর সরকার উপকূলীয় অঞ্চলে পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, সিরিয়ায় বর্তমান পরিস্থিতি নতুন করে গৃহযুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে।