আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নুসেইরাত ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে চার জিম্মিকে উদ্ধার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই অভিযান চালাতে ইসরায়েলি কমান্ডোরা বোরকা পরে এবং ত্রাণবাহী গাড়িতে করে সেখানে প্রবেশ করেছিল বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে এই তথ্য প্রকাশ করেছে আরব মিডিয়া আউটলেটগুলো।
সৌদি মালিকানাধীন আশারক সংবাদ চ্যানেলে স্থানীয় অধিবাসীদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, ইসরায়েলের একটি বিশেষ বাহিনীর ইউনিটের সদস্যরা ম্যাট্রেস বোঝাই একটি সাদা গাড়িতে করে ক্যাম্পে প্রবেশ করেছিল। এই ইউনিটের কয়েকজন সদস্য ছিল নারী। তারা গাজার নারীদের মতো পোশাক পরেছিল।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ওই ইসরায়েলি বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের ফিলিস্তিনি হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানায় যে, তারা রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখানে এসেছে। তারা আরও জানায়, তারা নুসেইরাতের বাজারের কাছে একটি স্থান ভাড়া করেছে। ওই স্থানের কাছেই নোয়া আরগামানি নামের জিম্মি আটক ছিলেন। সেখান থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে আরেকটি ভবনে অপর তিন বন্দী ছিলেন।
ইসরায়েলের ওয়াইনেট নিউজ সাইট জানায়, ইউনিটটি মিস্তারাভিমদের (যারা আরবদের মতো) নিয়ে গঠিত ছিল। এই বিশেষ বাহিনীটি ফিলিস্তিনি এলাকায় কাজ করতে বিশেষভাবে দক্ষ। তাদের মধ্যে স্থানীয় আরব এবং সাবলীলভাবে আরবি বলতে পারে এমন সদস্য রয়েছেন। জানা গেছে, ইউনিটটি গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রতি নির্মাণ করা অস্থায়ী জেটির কাছাকাছি এলাকা থেকে এসেছিল।
ছদ্মবেশে থাকা ইসরায়েলি কমান্ডোরা তাদের বহনকারী গাড়িটি থেকে বের হয়ে দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। তারা জিম্মিদের আটক থাকা ভবন দুটির দিকে এগিয়ে যায়, অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে। প্রত্যক্ষদর্শীরা আশারককে জানায়, একটি ত্রাণ ট্রাকে করে ইসরায়েলি বিশেষ বাহিনীর আরও কিছু সদস্য সেখানে প্রবেশ করে। ইসরায়েলি বাহিনী অবশ্য এই অভিযানের সময় ত্রাণবাহী গাড়ি ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছে।
পৃথক এক প্রতিবেদনে নুসেইরাত ক্যাম্পের এক অধিবাসী সৌদি নিউজ নেটওয়ার্ক আল-আরাবিয়াকে জানান, তিনি হামাসের সামরিক ইউনিফর্ম, হেলমেট এবং ব্যাজ পরা লোকদের তার প্রতিবেশীর বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখেছেন। ফলে প্রাথমিকভাবে মনে হয় যে, তারা হামাসের সদস্য। কিন্তু পরে বোঝা যায়, তারা ছিল ইসরায়েলি বিশেষ বাহিনীর সদস্য। তিনি জানান, তার প্রতিবেশীর বাড়ি লক্ষ্য করে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করা হয়।
প্রতিটি দিকেই গুলি করা হয়। হামাসের সাথে সংশ্লিষ্ট ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের প্রধান রামি আবদু জানান, ইসরায়েলি বাহিনী আবদুল্লাহ আলজামালের বাড়িতে প্রবেশের জন্য মই ব্যবহার করে। তার বাড়ি থেকেই তিনজনকে উদ্ধার করে ইসরায়েলি বাহিনী। ওই অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনীর কয়েক শ’ সদস্য অংশ নেয়। অভিযানের সময় ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সেখানে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে। ওই অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় প্রায় ৩০০ ফিলিস্তিনি নিহত হন। নিহতদের বেশিভাগই নারী ও শিশু।