আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ পালিয়ে গেছেন জাহাঙ্গীর আলম। ৪০০ কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া আলোচিত সেই পানি জাহাঙ্গীর এখন যুক্তরাষ্ট্রে। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তিনি বর্তমানে নিউইয়র্কের ওজোনপার্কে একটি বাসায় অবস্থান করছেন। পানি জাহাঙ্গীরের বড় ভাই মো. মীর হোসেন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মো. মীর হোসেন নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের নাহারখিল গ্রামে জাহাঙ্গীরের চার তলা বাড়ি আছে। ওই বাড়িতেই জাহাঙ্গীর থাকতেন। সেখানে এখন কেউ নেই। সব ফ্লোর তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
মীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, জাহাঙ্গীর দুই বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক সন্তান আর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তিন সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রী দেশে আছেন, তবে তার সঙ্গে জাহাঙ্গীরের যোগাযোগ নেই। দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। মীর হোসেন বলেন, আমরা এত দিন জানতাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার খুবই ভালো সম্পর্ক। তার কার্যালয়ে আসা-যাওয়া আছে। হঠাৎ রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়ার কথা শুনে লজ্জিত ও হতভম্ব হয়ে পড়ি। সন্ধ্যায় বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তখনো জাহাঙ্গীর দেশেই ছিল।
এরপর রাতে শুনেছি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। এর আগে রবিবার বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তার বাসার সাবেক এক পিয়নের অর্থসম্পদের বিষয়টি সামনে আনেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানাল এত টাকা? জানতে পেরেছি, পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’ প্রধানমন্ত্রী ওই পিয়নের পরিচয় নিয়ে ইঙ্গিত না দিলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র জানান, সেই পিয়নের নাম জাহাঙ্গীর আলম। তাকে নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের দুই মেয়াদের পুরোটা সময় এবং প্রধানমন্ত্রীর টানা তৃতীয় মেয়াদেরও কিছু সময় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলে থাকার সময়ও জাহাঙ্গীর তাঁর বাসভবন সুধাসদনের ব্যক্তিগত স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হলেও নিজের পরিচয় দিতেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী হিসেবে। এ পরিচয় ব্যবহার করে নিয়মিত সচিবালয়ে তদবির বাণিজ্য করতেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার কাছে নানা তদবির করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। একই পরিচয় ব্যবহার করে তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদও বাগিয়ে নিয়েছিলেন। নোয়াখালী-১ সংসদীয় আসনে নিজের একটি রাজনৈতিক বলয় তৈরি করেছেন।
জাহাঙ্গীরের ব্যাংক হিসাব জব্দ : এদিকে জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উল্লিখিত ব্যক্তি ও তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব থাকলে সেসব হিসাবের লেনদেন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ২৩(১)(গ) ধারার আওতায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলো।