আলোর যুগ স্পোর্টসঃ বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন এখন হামজাময়। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত শুধু হামজা আর হামজা। হবেই না কেন, বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এত বড় সুপারস্টার কখনো খেলেননি। দক্ষিণ এশিয়াতেও বিরল ঘটনা। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা ফুটবলার এ অঞ্চলের কোনো দেশের হয়ে খেলবেন তা স্বপ্নেও ভাবা যায়নি। সেই হামজা দেওয়ান চৌধুরী লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়িয়ে খেলতে বাংলাদেশে এসেছেন।
সোমবার তিনি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। তাকে একনজর দেখতে বিমানবন্দর ও বিভিন্ন সড়কে হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী উপস্থিত ছিলেন। সিলেট থেকেই হামজা সড়ক পথে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট নিজ গ্রামে পৌঁছান। সেখানেও তিনি ভালোবাসায় সিক্ত হন। হামজার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সিলেট ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেয়ে গেল। কেননা খ্যাতনামা ক্রীড়াবিদদের আগমন ঘটে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সিলেটে এই প্রথম বড় কোনো খেলোয়াড়ের আগমন ঘটল।
গ্রামের বাড়ি থেকে হামজা এখন ঢাকায় হোটেলে অবস্থান করছেন। সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশ ফুটবল দল এখন ঢাকায়। হোটেলেই সতীর্থদের সঙ্গে পরিচয়পর্ব সেরে নেবেন। ২১ মার্চ হামজাদের ভারত যাওয়ার কথা। এর আগে আজ হামজা আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলবেন। আজ সন্ধ্যায় বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় অনুশীলন করবে বাংলাদেশ ফুটবল দল।
হামজার আগমনের উত্তেজনাটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এশিয়ান কাপ বাছাই গ্রুপের প্রথম ম্যাচ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে বলে। গ্রুপে অন্য দুই দেশ সিঙ্গাপুর ও হংকং। কিন্তু যত উত্তেজনা ভারত ম্যাচ ঘিরে। জাতীয় দলে এর আগে ডেনমার্ক প্রবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার জামাল ভূঁইয়া ও ফিনল্যান্ড প্রবাসী তারিক কাজি জাতীয় দলে খেলেছেন এখনো খেলছেন। ১৯৭৮ সালে ইংল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার নাজিম শাহ জাতীয় দলে খেলেছেন। সেখান থেকে প্রবাসীর যাত্রা শুরু।
নারী জাতীয় ফুটবল দলে জাপান প্রবাসী মাতসুশিমা সুমাইয়া খেলছেন। সাফে শিরোপাজয়ী দলেও তিনি ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নারী বক্সার জিন্নাত ফেরদৌস, নারী সাঁতারে ব্রিটিশ প্রবাসী জুনাইদা আহমেদ ও জিমন্যাস্টিকসে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাইক সিজার বাংলাদেশের হয়ে অলিম্পিক গেমসে খেলেছেন। অ্যাথলেটিকসে ইংল্যান্ড প্রবাসী ইমরানুর রহমানও বাংলাদেশের হয়ে খেলেন। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন হামজা। এটাই তো স্বাভাবিক। একে তো প্রাণের খেলা ফুটবল। তারপর আবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কাঁপানো ফুটবলার। এ ক্ষেত্রে হামজার পাশে অন্য কাউকে মানায়!ফুটবলে বাংলাদেশ ও ভারত ম্যাচে উত্তেজনা থাকলেও জয়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বড্ড পিছিয়ে। ভারতের মাটিতে এখন পর্যন্ত একবারও জিততে পারেনি।
এবার হামজা আছেন বলেই ভারত জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। হামজার অভিষেক ম্যাচ। ভালোবাসার টানে মাঠে নিজের সেরাটা দেবেন। হামজা নিজে খেলবেন ও সতীর্থদের খেলাবেন। ভারত বধ করতে হামজা নিজেকে উজাড় করে দেবেন। হামজাকে ঘিরে কোনো প্রশ্ন ওঠার অবকাশ নেই। তিনি সতীর্থদের ক্যাম্পে ছিলেন না। এতেও কোনো যায় আসে না। ইংলিশ প্রিমিয়ারে দ্বিতীয় স্তরের লিগ শেফিল্ড ইউনাইটেডের অপরিহার্য খেলোয়াড় তিনি। বাংলাদেশে আসার আগেও ম্যাচসেরা হয়েছেন। যত প্রশ্ন হামজার সতীর্থদের নিয়ে। এত বড় খেলোয়াড়ের সঙ্গে তারা মানিয়ে নিতে পারবেন কি না? মেসি বিশ্ববিখ্যাত খেলোয়াড় হলেও আর্জেন্টিনা দলে যোগ্য সতীর্থরা তাকে সহযোগিতা করেন। নিজে খেলেন। অন্যদের খেলান।
কিন্তু হামজা যাদের খেলাবেন তারা কি তার কৌশল বুঝতে পারবেন? জাতীয় দলের সাবেক কোচ ও বিশিষ্ট ফুটবল বিশ্লেষক গোলাম সরোয়ার টিপু বলেন, ‘হামজা বাংলাদেশে খেলবেন এটাই অনেক বড় প্রাপ্তি। কিন্তু এত বড় খেলোয়াড় থাকার পরও ম্যাচ যদি না জেতে লাভ কি? তবে সতীর্থরা যদি হামজার কৌশল বুঝে খেলতে পারেন তাহলে বলব ভারতের মাটিতে ভারতকে হারানো সম্ভব। হামজাকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজর থাকবে বাংলাদেশের দিকে। সবকিছু মিলিয়ে দেশের ফুটবলে নতুন এক অধ্যায় সূচনা হতে চলেছে।’