
আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ জনকল্যাণের নামে গঠিত প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)–এর অনুকূলে কর মওকুফ, অনুদান গ্রহণ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সিআরআই–এর চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ হাসিনার মেয়ে ট্রাস্টি সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুদকের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বাকি আসামিরা হলেন সিআরআইয়ের ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ (বিপু), এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাব্বির বিন শামস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য রওশন আরা আক্তার, সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম. মোস্তফা কামাল।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজশে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪–এর ক্ষমতার অপব্যবহার করে সমাজসেবা অধিদপ্তরে নিবন্ধিত না থাকা সত্ত্বেও সিআরআই–কে কর মওকুফের সুবিধা দেন। জনকল্যাণের নামে গঠিত হলেও প্রতিষ্ঠানটি অনৈতিকভাবে কর সুবিধা গ্রহণ করে এবং সরকারি রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, সংশ্লিষ্টরা অনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ ও তদবিরের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করেছেন। সিআরআই–এর হিসাবে ২৩টি কোম্পানির কাছ থেকে মোট ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়। ২০১৩–২০১৪ অর্থবছর থেকে ২০২৩–২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি মোট ১০০ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৬ টাকা অবৈধভাবে আয় করেছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্রহণযোগ্য ব্যয় ২৯ কোটি ৫০ লাখ ৯৮ হাজার ০৯৬ টাকা বাদ দিলে সিআরআই–এর হিসাবে থাকার কথা ৭০ কোটি ৮০ লাখ ৪২ হাজার ৩৯০ টাকা, কিন্তু সেখানে পাওয়া গেছে মাত্র ৫৫ কোটি ১১ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৬ টাকা। অর্থাৎ ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২১ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দুদক জানিয়েছে।
দুদক আরও জানায়, সিআরআই–এর নামে পরিচালিত ২৫টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৪৩৯ কোটি টাকার বেশি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বেশি জমা এবং ১৯১ কোটি ২১ লাখ টাকার বেশি উত্তোলন করা হয়। এছাড়া আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪–এর শিডিউল ৬ এর পার্ট–বি এর ১১(বি) ধারা লঙ্ঘন করে ৩৬ লাখ ৫২ হাজার ৭৪২ টাকা আয়কর না দেওয়ার মাধ্যমে সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।
অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর, রূপান্তর ও আত্মসাতের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ ঘটনায় দুদক দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা, এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা অনুযায়ী মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
