Wednesday, March 12, 2025
Homeঅপরাধসাভারে গণ হত্যার সাথে জড়িত ২০ ভিআইপি আসামী এখনও ধরা ছোঁয়ার বাহিরে

সাভারে গণ হত্যার সাথে জড়িত ২০ ভিআইপি আসামী এখনও ধরা ছোঁয়ার বাহিরে

জাভেদ মোস্তফা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় দায়েরকৃত ৩৮টি হত্যা মামলায় জড়িত ভিআইপি পলাতক আসামীদের মধ্যে এখনও গ্রেফতার হন নি পুলিশ সহ আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ৩৭ জন। সাবেক এম পি ডা: এনামুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর মুল আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ র‌্যাব ডিবি ও আইনশৃংখলা বাহিনীর একাধিক টিম কাজ করছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি নেতৃত্ব দান কারী ও পুলিশের ছত্র ছায়ায় ছাত্র জনতার ওপর সরাসরি গুলি বর্ষন কারীদের মধ্যে ্এখনও পলাতক সাভার ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম, সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল গনি, সাভার ছাত্র লীগের সভাপতি আতিকুল ইসলাম আতিক , সাভার পৌর সভার সাবেক মেয়র আব্দুল গনি, তার ছেলে যুবলীগ নেতা তুহিন এবং শাহিন, সাবেক সংসদ সদস্য ডা: এনামের প্রধান সহযোগী ডা: শামীম হোসেন, ঢাকা জেলা আওয়াামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও ঢাকা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাসুদ চৌধুরী, সাবেক পৌর কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লা, সাবেক কাউনসিলার রমজান আলী, সাবেক সাভার ্ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল রানা, সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সাভার থানা আওয়মী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব, তার ছোট ভাই সাভার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর , সাভার ভাকুর্তা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন এবং আশুলিয়ায় লাশ পেড়ানোর ঘটনায় আন্তর্জাতকি আদালতে সনাক্ত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা সহ একাধিক মোস্ট ওয়ান্টেড ২০ জন সহ ৩৭ আসামী গ্রেফতার এড়িয়ে পুলিশ চোখে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সাভারের আশুলিয়ায় স্মরন কালের লোম হর্ষক ঘটনায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ওসি এএফএম সায়েদ গ্রেফতার আতঙ্কে ইতোমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছেন । নিজেকে আড়াল করতে নানা কৌশল খাটিয়েও শেষ রক্ষা না হওয়ায় যে কোনো মুহূর্তে অবৈধ পথে দেশত্যাগের পরিকল্পনা করছেন সায়েদ। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ইতোমধ্যেই ইমিগ্রেশনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তার বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেদিন বিকেলে লাশের স্তুপে একটি ভ্যানে আরো লাশ তোলা এবং পরে পোড়ানোর একাধিক ভিডিও প্রকাশ্যে এলে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সূত্রমতে, বীভৎস ও নারকীয় ওই ঘটনার নির্দেশদাতা হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ডিউটি করেছেন সিভিল ড্রেসে। পড়নে ছিলো নীল রঙের পোলো শার্ট, কালো রঙের ট্রাউজার। এক হাতে ব্যান্ডেজ। ট্রাউজারের পকেটে ছিলো ওয়্যারলেস সেট। তার নেতৃত্বে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঘিরে আশুলিয়া থানার ঘটে লাশ পোড়ানোর রোমহর্ষক বীভৎস ঘটনা ঘটে। সেদিন গণহত্যা আড়াল করতে স্কুলছাত্র আস সবুর, আবদুল মান্নান, মিজানুর রহমান, তানজিল মাহমুদ সুজয়, সাজ্জাদ হোসেন সজল এবং বায়েজিদকে হত্যা করে আশুলিয়া থানার সামনেই পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ ভিডিও তিনি সহ কয়েক জন পুলিশ কর্মকর্তা সনাক্ত হন। এদেরমধ্যে ঢাকা জেলার সাবেক এডিশনাল এসপি আব্দুল্লাহ আল কাফি, সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম, সাভার মডেল থানার সাবেক ওসি শাহ জামান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুদীপ কুমার গোপ, আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হারুন অর রশিদ , এসআই সাব্বির আহাম্মেদ সাভার ডিবির ইনস্পক্টর আরাফাত সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ গ্রেফতার হলেও আশুলিয়া থানার সাবেক এই ওসি সাইদ সহ অন্যরা রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার আড়ালে।
সাভারের গনহত্যার সাথে জড়িত হয়ে ব্যাপক আলোচিত হন, হত্যার নির্দেশ দাতা সাবেক সংসদ সদ্সঢ় ডা: এনামুর রহমান, সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম রাজিব ও তার প্রধান সহযোগি ছাত্র দলের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক ও সাইদুল ইসলাম সুজন তারা ছাত্র-জনতার ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে শিক্ষার্থী হত্যায় অংশ নেন। পিস্তল ও শর্টগন উচিয়ে ১৮/১৯/২০ জুলাই ও ৫ আগস্ট সরাসরি ছাত্র জনতার ওপর গুলিবর্ষনের একাধিক ভিডিও প্রকাশ্যে আসে এদের বিরুদ্ধে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া ব্যাপক আলোচিত কলেজ ছাত্র ইয়ামিন হত্য সহ সাভার ও আশুলিয়া থানায় ৩৮টির ও অধিক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু এদের মধ্যে সুজন, সেলিম মন্ডল ও ডা: এনামুর রহমান বাদে কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে নি।
ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মদ মুঈদ এর আগে জানিয়েছেন, মানবতাবিরোধী জঘন্য এমন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে ১৮ জুলাই সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে চৌরঙ্গী মার্কেটের সামনে থেকে শুরু হলেও ৫ আগস্ট বেপরোয়া পুলিশ ও উক্ত নেতাকর্মিরা শুরু করে আন্দোলন রত ছাত্র জনতার ওপর গুলি বর্ষন। মনে হচ্ছিল যেন সম্মুখযুদ্ধের ময়দান। মুখোমুখি অবস্থান নেয় দুই পক্ষ। একদিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিরা, অন্যদিকে খালি হাতে সাধারণ ছাত্র-জনতা। তাঁদের কারও কারও হাতে ছিল বাঁশের লাঠি আর ইটের টুকরা।পুলিশ তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ও কাঁদানে গ্যাসেরশেল ছুড়ছিল। লাশ পড়ছিল একের পর এক। আহত হচ্ছিলেন অনেকে। পথে বয়ে যাচ্ছিল রক্তের স্রোত।এ দৃশ্যগুলো বিভিন্ন ভাবে ভিন্ন ভিন্ন জনে মোবাইলে ধারন করে। সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই দুপুরে প্রথম শহিদ হন সাভার আরিচা মহাসড়কের পাকিজা পযয়েন্টে আন্দোলনরত এমআইএসটির শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়াামিন । তাকে খুব কাছ থেকে গুলি চালানো হয় তার ওপর। গুলিবিদ্ধ ইয়ামিনকে সাঁজায়ো যানে করে ঘোরানোর পর ফেলে দেওয়া হয় মহাসড়কে। এক পর্যায়ে পুলিশের দুই সদস্য ফেলার মতো চ্যাংদোলা করে এক লেন থেকে সড়কের অন্য লেনে ফেলে দেন ইয়ামিনকে। সেই ভিডিও পরে ভাইরাল হলে তা নজর কাড়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের। ইউনিট কমান্ডার হিসেবে এ ঘটনায় নিজে নেতৃত্ব দিয়ে এবং ঘটনা¯স্থলে উপস্থিত থেকে গুলি চালানোর হুকুম দিয়েছিলেন পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পাওয়া সাবেক ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি।
সেদিন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ঢাকায় মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছিল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও সাভার থেকে ছাত্র–জনতা রাজপথে সমবেত হতে থাকেন সকাল থেকেই। তাঁরা ঢাকার দিকে যাত্রা করলে সাভার পাকিজা মৌর ও বাসস্ট্যান্ডের সামনে পুলিশ বাধা দেয়। শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া।চলতে থাকে গোলাগুলি আর ইটপাটকেল নিক্ষেপ।একপর্যায়ে শেখহাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকায় তখন বিজয়ী ছাত্র-জনতার আনন্দোলনে বাঁধভাঙা জোয়ার, সাভারের পরিস্থিতি ছিল একেবারে ভিন্ন। ছাত্র-জনতার সঙ্গে সেখানে পুলিশের সংঘর্ষ, গোলাগুলি চলছিল। এ ঘটনা প্রায়সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে। শেখ হাসিনার পতনের পরের ছয় ঘণ্টায় সাভারে পুলিশের গুলিতে অন্তত: ১৫ জন প্রান হারান। গুলিতে মারাত্মক আহত হন ৩৩ জন। পরে অনেকে চিকিৎস্ধীন অবস্থায় মুত্যু বরন করেন। সাভারের বাসস্ট্যান্ড, থানা রোড, পাকিজা মৌর, নবীনগব ও বাইপাইল এই পাঁচটি জায়গায় হত্যাকান্ডের ঘটনা বেশি ঘটেছিল। এদের মধ্যে ৫ই আগস্ট ২৪ কয়েকঘন্টার মধ্যে একই সময় ১৭ জন নিহত হন। এরা হচ্ছে , কুরবান শেখ, ব্যবসায়ী নয়ন, হাসিবুর রহমান, মো. সাজ্জাদ, মো: আবদুল কাইয়ুম, মো. সুজন মিয়া, আলিফ আহমেদ সিয়াম, শ্রাবণ গাজী, মুজাহিদ মল্লিক, নাফিসা হোসেন মারওয়া, আল আমিন, সাফওয়ান আক্তার, মো. রফিক, নিশান খান, তানজীর খান মুন্না, মো. মিঠু ও আবদুল আহাদ। ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাভারে গুলিতে মারা যান কমপক্ষে ৭৩ জন। গুলিবিদ্ধ হন চার শতাধিক। এদের মধ্যে অসংখ্য মানুষ চিরতরের জন্য পঙঙ্গুগুত্ববরণ করেছেন, অন্ধ হয়েছেন অনেকে।
এ বিষয় সাভার মডেল থানার ও সি জুয়েল মিয়া জানান, উক্ত পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে ২৭ টি হত্যা মামলা সহ অর্ধ ডজন হত্যা চেষ্টা মামলা রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের একাধিক টিম কাজ করে যাচ্ছে।

ছবি: সাভার থানার ওসি জুয়েল মিয়া

ছবি:গনহত্যার সাথে জড়িত আসামি সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম
২:
গন হত্যার সাথে জড়িত পলাতক সাবেক ওসি সায়িদ, আশুলিয়া থানা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments