জাভেদ মোস্তফা 🇧🇩
শুক্রবার ভোর রাতে ক্লাবের সদস্যরা বিদ্যালয়ের জমি দখল করে ঘর তুলেছে। এ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।অবিলম্বে সকল অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তর ধামরাই উপজেলার পার্শবর্তী সাটুরিয়া উপজেলার রাধানগর সহকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে ঘর নির্মাণ করার অভিযোগে প্রশাসনিক ভাবে বাধা দেওয়া হয়েচছে । আজ শুক্রবার ভোর রাতে স্থানীয় একটি অনিবন্ধিত ক্লাবের সদস্যরা মাঠের একাংশ দখল করে সেখানে দোচালা টিনের ঘর নির্মাণ করেছে ।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, রাধানগর গ্রামের জনৈক রাখাল চন্দ্র রায় রেকর্ডমূলে রাধানগর মৌজায় ৮৮ শতাংশ জমির মালিক । তিনি গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ১৯৭৩ সালে রাধানগর প্রথমিক বিদ্যালয়ের নামে ৩৩ শতাংশ জমি দান করেন । পরবর্তীতে রাখাল রয়ের নাতি অরূপ রায় ১৯৮৮ সালে ওই জমিতে রাধানগর প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। অবশিষ্ট ৫৫ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় । যা সরকারি নথিতেও খেলার মাঠ ছিসেবে উল্লেখ রয়েছে ।
পরে ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয় ।একটি অনিবন্ধিত রাধানগর যুব উন্নয়ন ক্লাবের সদস্যরা আজ শুক্রবার ভোর রাতে মাঠের পূর্ব পাশের একাংশ দখল করে ঘর তুলেছে । ক্লাবটির কোন নিবন্ধন নেই বলে স্থানীয় সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে ।
জমি দখলে খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক বিষয়টি সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অবহিত এবং জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরেনম্বরে ফোন করা হয় । এর কয়েকঘন্টা পর সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমদ ঘটনাস্থলে যান । কিন্তু ততক্ষণে ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে যায় । এর কয়েক ঘন্টা পর সাটুরিয়া থানার উপপরির্শক (এসআই) মোজাম্মেল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন । এর আগে ২০২৩ সালে আব্দুল কাদের নামে এক ব্যক্তি বিদ্যালয়ের ৪ শতাং জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেন । এব্যাপারে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কাদেরের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে গত জুন মাসে ভূমি আইনে মামলা করা হয়েছে । মামলাটি চলমান রয়েছে ।
যোগাযোগ করা হলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিথিকা রায় বলেন, ‘আজ শুক্রবার ভোরে রাধানগর যুব উন্নয়ন ক্লাবের সদস্যরা বিদ্যালয়ের ৩৩ শতাংশ জমির এক কোনে দখল করে ঘর তুলেছে । ক্লাবটির কোনো নিবন্ধন নেই । বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমদ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জমিতে ঘর তোলার খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম । তারা এর আগেই ঘর তুলে ফেলেছেন। আমি তাদের কাগজপত্র নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি।’
তানভীর আহমদ আরও বলেন, ‘আজকে যেখানে ঘর তোলা হয়েছে তা বিদ্যালয়ের জমি এবং ওই জমি বিদ্যালয়ে নামে খারিজ করা।’
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘জমির মালিক ক্লাব হলে তারা রাতের আধারে ঘর তুলতো না। আমি কাগজপত্র নিয়ে ওই যুব উন্নয়ন ক্লাবের কর্মকর্তাদের আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি । এর আগে গত বৃহস্পতিবার তাদের বিদ্যালয়ের জমিতে ঘর তুলতে গেলে বারণ করা হয়েছিল। এর পরেও তারা ঘরে তুলেছে। এখন তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যোগাযোগ করা হলে রাধানগর যুব উন্নয়ন ক্লাবের সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, ‘রেকর্ড অনুযায়ী জমির মালিক রাখাল চন্দ্র রায় । কিন্তু তিনি রাধানগর স্পোর্টিং ক্লাবের সেক্রেটারি হিসেবে নথিতে উল্লেখ রয়েছে । তাই আমরা সেখানে ঘর তুলেছি।