Sunday, November 24, 2024
Homeদেশজুড়েসঞ্জীভা আবাসনের সেপটিক ট্যাংকে মিলল 'মাংসের টুকরো'

সঞ্জীভা আবাসনের সেপটিক ট্যাংকে মিলল ‘মাংসের টুকরো’

আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীভা গার্ডেন্স নামে যে আবাসনে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার খুন হয়েছে বলে অভিযোগ, সেই আবাসনের সেপটিক ট্যাংক থেকে মিলল মাংসের কুচি কুচি টুকরো। যার ওজন প্রায় ৩ থেকে ৪ কেজি।  মাংসের টুকরোর সাথে পাওয়া গেছে শরীরের হাড়ের টুকরো এবং মাথার চুল।

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডির পক্ষ থেকে মাংস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে লাশের টুকরো এমপি আনারের কিনা, তা নিয়ে এখনো কোনো নিশ্চয়তা মেলেনি। যদিও ওই আবাসনের এক মালি ও স্থানীয় বাসিন্দার দাবি মাংসের টুকরো এমপি আনারের।

নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে আবাসনের বিইউ-৫৬ ব্লকের পেছনে যে সেপটিক ট্যাংক আছে, সেই ট্যাংকে লাশের টুকরোর সন্ধানে অভিযান চালানো হয়। সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে লোক নামিয়ে সেই সেপটিক ট্যাংক থেকে ময়লা বাইরে বের করা হয়। আর সেই ময়লার ভেতর থেকে সাদা রঙের প্রায় কয়েক কেজি মাংস উদ্ধার করা হয়। সেই মাংস বাইরে আনার পর তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে।

সিদ্ধেশ্বর মন্ডল নামে সঞ্জীভা গার্ডেন্সের মালি নিজ চোখে সেপটিক ট্যাংক থেকে সেই লাশের টুকরো উদ্ধার করতে দেখেন। তার দাবি, ওই সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা খুলে প্রায় তিন থেকে চার কেজি মাংসের কিমা (পাকোড়া সাইজের) উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনা দেখে সেই ছবিও তুলতে যান তিনি। যদিও তদন্তকারী কর্মকর্তারা তাকে সেই ছবি তুলতে বাধা দেন। সিদ্ধেশ্বর জানান, এদিন বিকেলে তার ভগ্নিপতি ভূষণ শিকারি ওই সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কারের দায়িত্বে ছিলেন। সেই খবর পেয়েই তিনি ট্যাংকের কাছে গিয়ে মাংস উদ্ধারের ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন।

উল্লেখ্য, গত ১৩ মে ওই আবাসনে উঠেছিলেন এমপি আনার। আর ওই দিন রাতেই তাকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। খুনের পর তার লাশ টুকরো টুকরো করা হয় এবং এরপর ওই ফ্ল্যাটের টয়লেট দিয়ে ফ্ল্যাশ করে বাইরে বের করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ভাঙরের কৃষ্ণমাটি অঞ্চলেও লাশের টুকরো ফেলা হয় বলে অভিযোগ।

খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের বনগা থেকে জিহাদ হাওলাদারকে গ্রেফতার করে একই তথ্য পায় তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তারই ভিত্তিতে গত কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় কৃষ্ণমাটি এলাকায় বাগজোলা খালে অভিযান চালাচ্ছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। পাশাপাশি এই দিনও বাগজোলা খালের পাশাপাশি সঞ্জীভা গার্ডেন্সের বিপরীতে হাতিশালা খাল এবং ওই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংকে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। আর সেই অভিযানে মাংসের টুকরো উদ্ধারের পরেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজ্য জুড়ে।

ইতিমধ্যে এই মামলার তদন্ত করতে কলকাতা গেছেন ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল। তার প্রত্যাশা ছিল পুরো লাশ না পাওয়া গেলেও লাশের টুকরো পাওয়া যেতে পারে। আর সেই লক্ষ্যেই কলকাতার সিআইডি প্রতিনিধি দল কাজ করছে।

এদিন, মঙ্গলবার সকালে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, আমরা সিআইডিকে অনুরোধ করেছি যে নিউটাউনের ওই অভিজাত আবাসনের সেপটিক ট্যাংক খুলে যেন তদন্ত করা হয়। এই অনুরোধের ভিত্তিতেই এদিন সেপটিক ট্যাংক খুলে পরিষ্কার করা হয়। অন্যদিকে তদন্তকারী দলের আরেকটি টিম ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি বাগজোলা খাল ও সঞ্জীভা টাউনের বিপরীতে হাতিশালা খালে তল্লাশি অভিযান চালায় কলকাতা পুলিশের দুর্যোগ মোকাবিলা দলের প্রতিনিধিরা।

পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডির পক্ষ থেকেও সেপটিক ট্যাংক থেকে মাংস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে সেটি মানুষের মাংস কিনা বা এমপি আনার লাশের টুকরো কিনা, তা এখনো বলার সময় আসেনি। মাংসের পাশাপাশি হাড় এবং চুলের সন্ধান মিলেছে। পরবর্তী পদক্ষেপ অনুযায়ী সেই মাংসসহ অন্য নমুনা ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে, ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। তারপর বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments