Sunday, November 24, 2024
Homeবিনোদনযেভাবে কুৎসিত হয়ে উঠল একটি সুন্দরী প্রতিযোগিতা

যেভাবে কুৎসিত হয়ে উঠল একটি সুন্দরী প্রতিযোগিতা

আলোর যুগ বিনোদনঃ ঘটনাটি দ্বীপরাষ্ট্র ফিজির। সেখানকার পার্ল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পাতে আয়োজন করা হয়েছিল সুন্দরী প্রতিযোগিতা। উদ্দেশ্যে দেশের সেরা সুন্দরী নির্বাচন করা, যিনি প্রতিনিধিত্ব করবেন নভেম্বরে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠেয় মিস ইউনিভার্স সুন্দরী প্রতিযোগিতায়।

গত ৩০ আগস্ট চূড়ান্ত বিজয়ী ঘোষণা করার দিন ধার্য ছিল। ঘোষণা অনুযায়ী ওই দিন রাতে চূড়ান্ত পর্বের আয়োজন করা হয়। সবকিছু ঠিকঠাকই এগোচ্ছিল। ফুলের তোড়া হাতে মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা মানশিকা প্রসাদকে সেরা সুন্দরীর মুকুট পরিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু এর কিছু সময় পরই সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিষয়গুলো যেন কুৎসিত পর্বে রূপ নিল।

পরবর্তী কয়েক দিনে ঘটল নানা নাটকীয় ঘটনা। ছিনিয়ে নেওয়া হল সুন্দরীকে পরানো সেই মুকুট। উঠল ভিত্তিহীন অনেক অভিযোগ। আবির্ভাব ঘটল একজন প্রতিযোগীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকা রহস্যময় একজন ব্যক্তির।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিজয়ী ঘোষণার দু’দিন পর আয়োজক সংস্থা মিস ইউনিভার্স ফিজি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়। এতে যেন সবকিছু ওলট-পালট লাগে ২৪ বছর বয়সী এমবিএ শিক্ষার্থী মানশিকার কাছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিযোগিতার ‘নীতিমালায় গুরুতর লঙ্ঘন’ হয়েছে। শিগগিরই ‘সংশোধিত ফল’ ঘোষণা করা হবে।

এর কয়েক ঘণ্টা পর মানশিকাকে বলে দেওয়া হয়, মিস ইউনিভার্স সুন্দরী প্রতিযোগিতায় তার যাওয়া হচ্ছে না। তার স্থলাভিষিক্ত হবেন প্রতিযোগিতায় রানারআপ হওয়া সিডনির বাসিন্দা নাদিন রবার্টস। ৩০ বছর বয়সী এই মডেল ও আবাসন ব্যবসায়ীর মা ফিজির নাগরিক।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়, প্রতিযোগিতায় ‘সঠিক প্রক্রিয়া’ মানা হয়নি। ভোট কারচুপির মাধ্যমে মানশিকাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। অনুষ্ঠান আয়োজকেরা আর্থিক সুবিধা পেতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন প্রতিযোগীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে।

ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল মানশিকা এক বিবৃতিতে জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তিনি কিছু সময়ের জন্য বিরতি নেবেন। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ঘটে যাওয়া অনেক কিছু সম্পর্কেই সাধারণ মানুষ জানে না।

এদিকে ‘দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য’ মিস ইউনিভার্স ফিজিকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দেওয়ার আগে সংহতি জানিয়ে দেওয়া বার্তায় নতুন বিজয়ী নাদিন বলেন, “এ ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব আমাদের সবার ওপরই পড়েছে।”

যেভাবে কুৎসিত রূপ নেয় সুন্দরী প্রতিযোগিতা

সাত বিচারকের একজন ছিলেন মেলিসা হোয়াইট। তিনি বলেন, সবকিছু ঠিকমতোই চলছিল। আরেকজন বিচারক জেনিফার চান বলেন, এই পর্যায়ে মানশিকা সুস্পষ্ট বিজয়ী ছিলেন। তাকে ৪-৩ ভোটে প্রথমে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল।

তবে চানের মতে, সদ্য জয়ী মিস ইউনিভার্স ফিজি যখন মুকুট মাথায় মঞ্চে দাঁড়ান, তখন বিচারকেরা বুঝতে পেরেছিলেন কোথাও যেন ঘাপলা আছে। তার ডান দিকে রানারআপ উত্তরীয় পরা নাদিনকে ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল।

পরদিন বিচারকদের সঙ্গে নৌভ্রমণে যান মানশিকা। যদিও তখনও দাফতরিকভাবে মানশিকার বিজয় নিশ্চিত করা হয়নি। শুধু তা–ই নয়, ওই ভ্রমণে বিচারকদের একজন রিরি ফেবরিয়ানি অনুপস্থিতি ছিলেন, যা ছিল চোখে পড়ার মতো একটি ঘটনা। তিনি লাক্স প্রজেক্টসের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। এই কোম্পানি মিস ইউনিভার্স ফিজি আয়োজনের লাইসেন্স কিনেছিল।

বিচারক মেলিসা বলেন, “আমার কাছে বিষয়টি অদ্ভুত ঠেকছিল।” ফেবরিয়ানির সঙ্গে একই কক্ষে ছিলেন তিনি। মেলিসা বলেন, “কিন্তু তিনি (ফেবরিয়ানি) শুধু বলতেন তাকে অনেক কাজ করতে হবে এবং তার বসের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন।” বিশ্রামের কথা বলে তিনি নৌভ্রমণেও যোগ দেননি।

ফেবরিয়ানি ফোনে কার সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান করছেন, অন্য কারও সেটা জানার উপায় নেই। তবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তার কক্ষসঙ্গী ‘জ্যামি’ নামের একজনের সঙ্গে অনবরত বার্তা আদান-প্রদান ও ফোনে কথা বলে যাচ্ছেন।

আবাসন কোম্পানি লাক্স প্রজেক্টসের প্রতিনিধি হিসেবে বিচারক প্যানেলে ছিলেন ফেবরিয়ানি। কিন্তু তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টিও দেখতেন। ফেবরিয়ানি বিচারক প্যানেলে থাকার পরও ভোটের ফলাফলে খুশি হতে পারেনি কোম্পানিটি।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লাক্স প্রজেক্টস বলে, লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানের একটি ভোট থাকা উচিত। আর চুক্তিবদ্ধ আয়োজক গ্র্যান্ট ডোয়ার সেই ‘ভোট গুনতে ব্যর্থ হয়েছিলেন’। লাক্স প্রজেক্টস নাদিনকে ভোট দিত, এতে ফলাফল ৪-৪–এ সমতায় থাকত। এছাড়া কোম্পানিটি বলেছে, এ অবস্থায় লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানেরই ‘নির্ধারক ভোট’ আছে, যা নাদিনকে জয়ী করে।

কিন্তু বিচারক চান বলেন, “প্রতিযোগিতার কোনও পর্যায়েই আমাদেরকে অষ্টম বিচারক সম্পর্কে কিংবা কোনও অনুপস্থিত বিচারক সম্পর্কে বলা হয়নি।” তিনি বলেন, “এটা ওয়েবসাইটেও ছিল না, কোথাও বলা হয়নি। এছাড়া আপনি একটি প্রতিযোগিতার সময় না থেকে কীভাবে ভোট দিতে পারেন?”

বিচারক মেলিসার কিছুটা খটকা লাগল। তিনি বলেন, কিছুটা খোঁজ নিয়ে দেখতে পান, লাক্স প্রজেক্টসের সঙ্গে জ্যামি ম্যাকইন্টায়ার নামের অস্ট্রেলিয়ার এক ব্যবসায়ী ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। আর নাদিনের সঙ্গে তার বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে।

অনলাইনে পাওয়া তথ্যানুযায়ী নিজেকে উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন জ্যামি। ২০২২ সাল থেকে নাদিনের সঙ্গে তার বৈবাহিক সম্পর্ক। প্রতারণামূলক আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগের কারণে ২০১৬ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবসা করার বিষয়ে তার ওপর এক দশকের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments