আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে যেতে ইসরায়েলের অনীহাকে ‘চতুর চাল’ বা ‘নোংরা খেলা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস। তারা বলেছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা এড়িয়ে যাচ্ছে এবং যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে আবার যুদ্ধ শুরু করতে চায়।হামাসের রাজনৈতিক দপ্তরের জ্যেষ্ঠ নেতা বাসেম নাইম শনিবার আল জাজিরাকে বলেন, আমরা মনে করি, এটি ডানপন্থী ইসরায়েলি সরকারের এক ধরনের খেলা, যার উদ্দেশ্য চুক্তিকে ব্যাহত করা এবং যুদ্ধ ফের শুরু করার বার্তা দেওয়া।
গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর হয়। ছয় সপ্তাহব্যাপী এই ধাপে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি, গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু এবং ত্রাণ সরবরাহের কথা ছিল। দ্বিতীয় ধাপে সব ইসরায়েলি বন্দিমুক্তি ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথা রয়েছে। তবে হামাস বলছে, ইসরায়েল এখন দ্বিতীয় ধাপে যেতে রাজি নয়। বাসেম নাইম জানান, প্রথম ধাপ চলাকালে ১০০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, প্রতিশ্রুত ত্রাণ ঢুকতে দেওয়া হয়নি, এমনকি গাজাকে দুই ভাগে ভাগ করা নেটজারিম করিডোর থেকেও সেনা প্রত্যাহার হয়নি।
ইসরায়েলের কিছু কর্মকর্তাও নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, হামাসের অভিযোগ সত্য, যদিও সরকারিভাবে তা অস্বীকার করা হয়েছে। চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েল গাজায় ৬০ হাজার ভ্রাম্যমাণ ঘর ও ২ লাখ তাবু পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু সেটিও বাস্তবায়িত হয়নি। ইতোমধ্যেই গাজার ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং অঞ্চলটির বিশাল এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়, যাতে ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজা সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও ১৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দ্বিতীয় ধাপে যেতে নারাজ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধাপে সেনা সংখ্যা হ্রাস ও সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার জড়িত, যা নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য হুমকি হতে পারে। ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, নেতানিয়াহু দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী রন ডারমারকে। বিশ্লেষকদের মতে, ডারমার ইসরায়েলি রাষ্ট্রের নয়, বরং নেতানিয়াহুর হয়ে কাজ করেন। ফলে আলোচনায় পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে, হামাস জানিয়েছে, তারা গাজা শাসনের দায়িত্ব ছাড়তে প্রস্তুত এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে পরিচালিত যেকোনো সরকারকে স্বাগত জানাবে। হামাসের মতে, আমাদের মূল লক্ষ্য ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান, স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অধিকার অর্জন। প্রশাসনিক দায়িত্ব না নিয়ে আমরা রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সশস্ত্র প্রতিরোধসহ সব পথেই সংগ্রাম চালিয়ে যাব।