আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ যুক্তরাষ্ট্রে ভুল রায়ের কারণে টানা ৪৩ বছর কারাগারে কাটানো সুব্রহ্মণ্যম সুবু বেদাম এখন নতুন এক দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি। দীর্ঘদিন পর আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হলেও তাঁকে এবার নিজ জন্মভূমি ভারতে ফেরত পাঠাতে চায় মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ (আইসিই)। রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিবিসি জানিয়েছে, মুক্তির আনন্দ উপভোগ করার আগেই বেদামকে ফের অভিবাসন আইনের জালে ফাঁসানো হয়েছে।
চার দশক আগে বেদামকে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে তাঁর রুমমেট টম কিনসার হত্যার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৮০ সালে ১৯ বছর বয়সী কলেজশিক্ষার্থী কিনসারের লাশ ৯ মাস পর এক জঙ্গলে উদ্ধার করা হয়, মাথায় গুলির চিহ্নসহ। স্পষ্ট প্রমাণের অভাব থাকা সত্ত্বেও আদালত বেদামকে দোষী সাব্যস্ত করে। পরে একটি মাদক মামলার দায়ে আরও পাঁচ বছরের সাজা যোগ হয়, যা পূর্ববর্তী সাজার সঙ্গে একত্রে ভোগ করতে বলা হয়েছিল।
বছরের পর বছর ধরে বেদাম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন। তাঁর পরিবার ও সমর্থকেরা মামলাটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে নতুন প্রমাণ হাজির হলে পেনসিলভানিয়ার জেলা অ্যাটর্নি বার্নি ক্যান্টরনা তাঁকে হত্যার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।
কিন্তু মুক্তির আনন্দ স্থায়ী হয়নি। আদালত থেকে বের হওয়ার আগেই আইসিই কর্মকর্তারা তাঁকে ১৯৮৮ সালের পুরোনো বহিষ্কারাদেশ দেখিয়ে আটক করেন। সেই সময়ের আদেশটি দেওয়া হয়েছিল হত্যার দণ্ড ও মাদক মামলার ভিত্তিতে। যদিও হত্যার রায় বাতিল হয়েছে, তবু মাদক মামলার রায় বহাল থাকায় আইসিই জানায়, “তারা কেবল আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে।”
বেদামের বোন সরস্বতী বেদাম হতাশ কণ্ঠে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, এবার তাকে বাড়ি নিয়ে যাব। কিন্তু সে আবার বন্দী—শুধু অন্য এক কারাগারে।” সরস্বতী আরও জানান, সুবু বেদাম যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডধারী, জন্ম ভারতে হলেও মাত্র নয় মাস বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। এখন ভারতে তাঁর কোনো ঘনিষ্ঠ আত্মীয় নেই। পরিবারের মতে, তাঁকে সেখানে পাঠানো মানে আবারও তাঁর জীবন কেড়ে নেওয়া।
বেদামের আইনজীবী আভা বেনাচ বলেন, “একজন মানুষ যিনি ৪৩ বছর অন্যায়ের শিকার হয়েছেন, তাঁকে এখন এমন দেশে নির্বাসিত করা হবে, যেখানে তাঁর কোনো শিকড় নেই—এটি হবে আরও একটি ভয়াবহ অন্যায়।” বর্তমানে বেদামের পরিবার ও আইনজীবীরা তাঁর অভিবাসন মামলা পুনরায় খোলার আবেদন প্রস্তুত করছেন। তাঁদের আশা, আদালত এবার তাঁর মানবিক দিক, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সমাজসেবার ইতিহাস বিবেচনা করবে—আর সত্যিকারের মুক্তি মিলবে সুব্রহ্মণ্যম সুবু বেদামের।