আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ বুধবার সন্ধ্যা থেকে টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত ভারতের রাজধানী দিল্লি। কার্যত পানির তলায় দিল্লি ও এনসিআর (দিল্লির সীমান্তবর্তী উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থানের কিছু জেলা) সংলগ্ন একাধিক এলাকা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘরের মধ্যে বন্দি মানুষ, ব্যাহত ট্রাফিক ও বিমান পরিষেবা। সবমিলিয়ে বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জনজীবন। বৃষ্টি জনিত কারণে এখনো পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে দিল্লিতে ৪ জন, গুরগাঁওয়ে ৩ জন এবং গ্রেটার নয়ডায় বাকি ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রবল বর্ষণের কারণে দিল্লির গাজীপুর এলাকায় বড় ড্রেনে পড়ে হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২২ বছর বয়সী তরুজা নামে এক নারী ও তার ৩ বছরের সন্তানের। সাপ্তাহিক বাজার করে তারা যখন ঘরে ফিরছিলেন সেই সময় রাস্তা ভেবে চলতে গিয়ে ১৫ ফুট গভীর ড্রেনে পড়ে যান এবং তলিয়ে যান। পরে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। দেয়াল ধসে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। বিন্দাপুর এলাকায় টিউশন শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে তরিতাহত মৃত্যু হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১২ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীর। গুরগাঁও’য়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, গ্রেটার নয়ডার দাদরি এলাকায় দেয়াল ধসে পড়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রবল বৃষ্টির কারণে উত্তর দিল্লির সবজি মান্ডি এলাকায় বাড়ির দেওয়াল ভেঙে পড়ে আহত হয়েছেন ১ জন, বসন্তকুঞ্জ এলাকাতেও দেয়াল ধসে আরও একজনের আহত হবার খবর পাওয়া গেছে। দরিয়াগঞ্জ এলাকায় একটি স্কুলের দেয়াল ভেঙে একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনায় পুলিশের তরফে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। অত্যধিক বৃষ্টির কারণে দিল্লি বিমানবন্দরে নামার বদলে ১০টির বেশি ফ্লাইটের গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি বিমানকে নামানো হয়েছে জয়পুরে, লখনওয়ে নামানো হয়েছে দুটি বিমানকে।
দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন তারা বৃষ্টির কারণে বৃহস্পতিবার দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকায় সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুল বন্ধ থাকবে। দিল্লিতে রেড এলার্ট জারি করে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, বৃষ্টির হাত থেকে এখনই নিস্তার পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত দিল্লি ও এনসিআর এলাকায় বজ্রপাতসহ ঝড় ও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আকাশ মেঘলা থাকবে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩০ থেকে কিলোমিটার হতে পারে।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত মধ্য দিল্লির প্রগতি ময়দানে ১১২.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়াও ময়ূর বিহারে ১১৯ মিলিমিটার, সফদরজং এলাকায় ৭৯.২ মিলিমিটার, পুসা এলাকায় ৬৬.৫ মিলিমিটার, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ৭৭.৫ এবং পালাম এলাকায় ৪৩.৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বুধবার দিল্লিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
প্রবল বর্ষণে দিল্লি ও এনসিআর এলাকায় একাধিক জায়গায় বিশেষ করে আন্ডারপাস এলাকায় পানি জমে যাওয়ার কারণে বিপর্যস্ত যান চলাচল। ফলে দিল্লি-নয়ডা এক্সপ্রেসওয়ে, মথুরা রোড সহ নয়ডা, গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদ, গাজিয়াবাদ, প্রগতি ময়দান, কাশ্মীরি গেট, সরাই কালে খান, আইটিও, এইমস- একাধিক জায়গায় গাড়ির লম্বা লাইন। কার্যত ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ির মধ্যে কাটাতে হচ্ছে যাত্রীদের। কনট প্লেস, মধ্য দিল্লি, রাজেন্দ্রনগরসহ একাধিক এলাকায় হাঁটু সমান পানি। প্রশাসনের তরফ থেকে দিল্লি ও এনসিআর এলাকায় বাসিন্দাদের ঘরের মধ্যেই থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দিল্লির পাশাপাশি টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত রাজস্থান। বুধবারের পর বৃহস্পতিবার হচ্ছে রাজস্থানের একাধিক জেলায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত। জয়পুর আবহাওয়া দপ্তর বলছে গত ২৪ ঘণ্টায় কারাউলি জেলায় সর্বাধিক ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। রাজস্থানের পশ্চিমাংশের কিছু জায়গা হালকা বৃষ্টিপাত এবং রাজস্থানের পূর্বাঞ্চলের কিছু জায়গায় ভারী থেকে ভারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়েছে।