২০ জুলাই এর ফাইল ছবি
জাভেদ মোস্তফা, প্রতিবেদক
বৈষম্য বিরোধি আন্দোলনে যোগ দিয়ে গত ২০ জুল্ইা গুলিতে আহত ফল ব্যাবসায়ী আর্থক অনটনে এখন লোকচক্ষুর আড়ালে নিরবে শয্যাসায়ী প্রায় ৪ মাস ধরে। টাকা না থাকায় ঠিক মতো চিকিৎসা হচ্ছে না। ছেলে মেয়ে নিয়ে অসহায় ভাবে দিন কাটাচ্ছেন। দেহের ভিতর ২৩ টি গুলি নিয়ে অসুস্থ এই ফল ব্যবসায়ী দিশাহারা।
বৈষ্যম্য বিরোধী আন্দোলনে আহত ফল ব্যবসায়ী ইসমাইল
এ যাবৎ কোন সাহায্য পাননি তিনি। টাকার অভাবে কোন হাসপাতাল তাকে স্থায়ী ভাবে রেখে চিকিৎসাও দিচ্ছে না। মঙ্গলবার তার পরিবারের সাথে বাসায় দেখা করে তার ওপর গুলিবর্ষন ও নির্যাতনের করুন বর্ননা জানলাম ,তার নাম মো: ইসমাইল হোসেন (৪৮) পিতা মো: আব্দুল গনি তিনি সাভারের শিমুলতলা এলাকার মো: মালেক সাহেবের বাড়ীতে ভাড়া থাকেন। ।স্ত্রী দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তিনি ৪ মাস ধরে অসুস্থ্য অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। ঘটনার পর থেকে তার শরীর ভেঙ্গে পড়েছে। ব্যথায় কষ্ট চলা ফেরা করেন সামান্য। চিকিৎসা নিয়ে বেসামাল এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন তার দেহে ২৩ টি গুলির একটিও বের করা হয় নি। তিনি বলেন,গত ১৮ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সম্মিলিতভাবে ছাত্র জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে। আমি ঐ আন্দোলনে শরিক হয়েছিলাম, নিজ খরচে আন্দোলনে যুক্ত থেকে সাভ্রা বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলনকারী ছেলে মেয়েদের পানি খাওয়াতাম। কারন একটি সরকারী বিশ^বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষর ছাত্রী আমার বড় মেয়ে ইশিতা আখতার ইতি ও তাদের সাথে আন্দোলনে যুক্ত ছিল। গত ২০ জুলাই ২০২৪ ইং তারিখে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন আমি সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের নাজ প্যালেসের সামনে ছাত্র জনতার মিছিলে থাকা কালীন সময় পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ধাওয়া খেয়ে বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন ক্যাপ্টেন সামাদ টাওয়ারের ভিতর দিয়ে নাজ প্যালেসে আমার ভাড়া করা গোডাউনের উদ্দেশ্যে ছুটে যাই। সে সময় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে পুলিশ বেষ্টিত স্থানীয় আওয়ামী লীগের মিছিল সমাবেশ ভাংচুর ও যানবাহনে অগ্নিকান্ডের মতো ঘটনা চলছিল। চারিদিকে আতঙ্ক বিরাজ করায় আমি তাৎক্ষনিক স্থানী সামাদ টাওয়ার ভবনের কেয়ারটেকারের রুমে ঢুকে যাই। এ সময় ঐ রুমে মালিকের কেয়ার টেকার হৃদয় এবং আমার পরিচিত ব্যবসায়ী সৈকত সেখানে অবস্থান করছিল। আমরা আতঙ্কে রুমের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার পর ১৫/২০ জন পুলিশও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ক্যাপ্টেন সামদ টাওয়ার্রে দারোয়ান কাজী নুরুজ্জামনকে জবরদস্তি মার্কটের কলাপসিবল গেইট খুলিয়ে নাজ প্যালেসে আসে এবং আমাদের বন্ধ রুমের জানালা ভেঙ্গে আমাদের ওপর গুলিবর্ষন করে এবং কয়েকজন পুলিশ লাথি দিয়ে দরজা ভেঙে আমাদের ওপর গুলি চালায়। এ সময় সিভিল পোষাকে পুলিশের জ্যাকেট পরহিত এক অস্ত্রধারী ব্যাক্তি খুব কাছ থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে আমাদের ওপর তিনটি গুলি বর্ষন করে। এ সময় অন্যন্য অস্ত্রধারী পুলিশেরা এলোপাথারী ভাবে পুরো ভবনে গুলি বর্ষন করে চলে যায়। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত এই তান্ডব লিলা চলে। এর পর তারা চলে গেলে গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় আমরা ঘর থেকে বের হলে স্থানীয় লোকজন ও স্বজনরা আমাদের দুই জনকে উদ্ধার করে পৃথক পৃথক ভ্যানে করে এনাম মেডিক্যালে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর আমার আর্থিক অবস্থা ভাল নয় জেনে এনাম মেডিক্যাল এর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমাকে সুচিৎসা না দিয়ে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চলে যেতে বলো হয়। সাথে সাথেই আমি গুরুতর আহত অবস্থায় এনাম মেডিক্যাল ত্যাগ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর জরুরী বিভাগের ভর্তি হই। রাতেই আমার অবস্থার অবনতি হলে আমাকে রাজধানীর সারওয়াদি হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সারওয়ার্দি হাসপাতালের জরুরী বিভাগের টিকিট কেটে বর্তমানে অদ্য অবধি সেই হাসপাতালের তত্বাবধানেই চিকিৎসা গ্রহন করছি। এক্সরে করার পর আমার শরীরে পুলিশের ছোঁড়া ২৩টি গুলির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যা বর্তমনে আমার শরীরেই বিদ্ধ আছে। অর্থিক সংকটের কারনে সেগুলি এখনও অপারেশেনের মাধ্যমে বের করা সম্ভব হয় নি। কিছুটা সুস্থ্য হয়ে আমাদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষনের ভিডিও চিত্র ভবনের মালিকের সিসি ক্যামেরা থেকে সংগ্রহ করি এবং চিকিৎসা চলাকালীন নাজ প্যালেস ভবনের সিসি ক্যামেরা দেখে আমি কয়েকজনকে সনাক্ত করতে পারলেও বিভিন্ন সুত্র ও লোক মারর্ফত জানতে পারি আওয়ামী সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদ উজ্জামান কামাল নির্দেশে ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা: এনামুর রহমানের দলীয় লোকজন এর সহযোগতিায় সেদিন সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি, সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম, সাভার মডেল থানার সাবেক ওসি শাহ জামান, এসআই সাব্বির আহাম্মেদ ও আরো কিছু পুলিশ সদস্য সহ যারা সেদিন পুলিশে সাথে ও উপস্থিত ছিলেন তারা আমাদের ওপর এই নির্য়তন চালায়। আমি তাদের বিচার দাবী করছি। আহত ইসমাইলের বড় মেয়ে এই প্রতিবেদককে জানান, সেদিন সারা সাভার রনক্ষেত্রে পরিনত হয়েছিল। বাবার খবর শুনে আমরা কেউ ঘর থেকে বের হয়ে তাকে দেখতে যেতে পারি নি। হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার পর আমার চাচার রাত দুই টার সময় ৫ হাজার টাকা দিয়ে এম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকার সারওয়ার্দি হাসপাতালে পাঠাই। কিন্ত টাকা না থাকায় কোথাও বাবা সুচিৎসা পাই নি। ডাক্তাররা বলেছেন আরো সুস্থ হলে তার দেহের গুলিগুলো বের করার উদ্যাগ নিতে হবে। কিন্তু আমাদের সেই চিৎিসা করানোর মতো আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই। ইসমাইলের স্ত্রী শহিদা আখতার যুগান্তরকে জানান, তার স্বামী এখন বেকার অবস্থায় আছে। চিকিৎিসা তো দুরের কথা সংসার চালানো টাই এখন দুরুহ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ঋন করে ও যা ছিল সব টাকা শেষ। বাড়ী ভাড়াও প্রায় ৪৫ হাজার টাকা বাকী রয়েছে। তিনি তার স্বামীর উন্নত চিকিৎসা ও দোষীদের বিচার দাবী করেছেন।
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত জুলাইয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সংবাদ সম্মলনে আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করেন। এতে বাংলদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আন্দোলনকারীদের নির্মূলের নির্দেশ দেন। এবই ভাবে সাভারও রনক্ষেত্রে পরিনত হয়।
সি সি ফুটেজে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরের ছবি