জাভেদ মোস্তফা
সাভারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ও আহতদের ম্যানেজ করে দেদারসে চলছে মামলা বানিজ্য। এ ধরনের এক সাবেক কয়েকজন বিএনপি নেতাকে কেন্দ্র করে বেশ অভিযোগ উঠেছে সাভার জুড়ে। স্থানীয় রুবেল জানান, সাবেক ছাত্রদল নেতার লোক রাব্বির সাথে আমাদের জমি নিয়ে ঝামেলা থাকাতে আমাকে দুটি মামলায় জড়ানো হয়েছে। নাম কাটানো নিয়ে হাজার হাজর টাকা অর্থ দাবি করা হয়। টাকা না দেওয়ায় দুটি মামলায় আসামি করা হয়েছে। স্থানীয় সাভার কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র নুরুল আমিনের ছেলে রাকিব আলোর যুগকে জানান,আমার নাম মামলায় দিয়ে আমার নিকট বিশাল অঙ্কের টাকা চাওয়া হয়। পরে আমার পিতা স্থানীয় বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতাদের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করেন। এলাকার মিলন তার ভাগ্নে রকি এই প্রতিবেদককে জানান, নাহিদ হাসান নামের একজন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহত ব্যক্তির হত্যাচেষ্টা একটি মামলায় তাদের নাম দেওয়া হয়। পরে বিএনপির এক সাবেক নেতার বাসভবনে বসে ৫০ হাজার টাকায় বিষয় রফাদফা করি। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় মামলার আর্জিতে বাদি নাহিদের স্পষ্ট কোন ঠিকানা নেই এবং মামলায় দেয়া মোবাইল নাম্বারে ১ টি ডিজিট কম দেয়া আছে। তাই তার কোন খোঁজ ও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে তার পক্ষে সাবেক এক ছাত্র দল নেতা তদবির চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ । এলাবাসী জানান, এক সময় তিনি বিএনপির ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি সাবেক সাভার পৌর ছাত্র দলের সাধারন সম্পাদক ছিলেন । আন্দোলনে ভুক্তভোগী নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগসাজশে দায়ের হওয়া মামলায় নাম অন্তর্ভুক্ত এবং পরবর্তীতে অনৈতিক সুবিধা গ্রহনের মাধ্যমে নাম বাদ দেওয়ার ঘটনা এখন ঘটছে অহরহ। এ থেকে বাদ যাচ্ছে না সাংবাদিক, বিএনপি নেতা, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। এর নেপথ্যে নাম উঠে এসেছে সাভার পৌর ছাত্রদলের বিতর্কিত কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এর বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সাভারে অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি শহীদ হন যার অধিকাংশই মৃত্যুবরন করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে। এঘটনার পর ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের ম্যানেজ করে দায়ের হওয়া হত্যা ও হত্যা চেষ্টা মামলায় নাম জড়ানো হচ্ছে পেশাদার সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের। ব্যক্তিগত আক্রোশেও প্রতিপক্ষের নাম জুড়ে দেওয়া হচ্ছে এসব মামলায়। এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব ঘটনার পেছনে রয়েছে ছাত্র দলের পৌর ও বিএনপির সাবেক নেতারা। এলাকাভিত্তিক ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে তাদের নাম জুড়ে দেওয়া হচ্ছে এসব মামলায়। নাম দেওয়া হচ্ছে বিএনপির নিরিহ কর্মিদের বিরুদ্ধে । হৃদয় নামের এক চৌকিদার ভাড়াটিয়া গত ২০ জুলাই নিজ কর্মস্থলে পুলিশের গুলিতে আহত হন। ঐ বাড়ির সিসি ক্যামেরা তার ওপর এক দল পুলিশের গুলি বর্ষনের ভিডিও ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও এক বিএনপি কর্মী তাকে কিছু টাকার প্রলোভন দেখিয়ে কোর্টে মামলার করান। কিন্তু মামলায় পুলিশের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীর ১৩০ জনের নামের নীচে ৫৬ জন নিরিহ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তে করতে গিয়ে পিবিআই এর এক কর্মকর্তা ভিডিও ফুটেজ দেখে হতবাক হয়ে যান। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেও অনেকের নাম দেওয়া হচ্ছে এসব মামলায়। এমনকি প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামও অন্তভূক্ত করা হচ্ছে। এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ মানুষ। বি এনপি শীর্ষ নেতারা জানান, সাভারে মামলা দায়েরর সাথে জড়িত বিএনপির কর্মিরা জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্হা গ্রহন করা হবে।এর আগে সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মামলাগুলো দায়ের হউক। কেউ দলালি করে নিরিহ মানুষকে আসামি করায় তবে তার বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। শেষ