Wednesday, October 30, 2024
Homeজাতীয়বেনজীরের খোঁজ পাচ্ছে না কেউ

বেনজীরের খোঁজ পাচ্ছে না কেউ

আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগামী ৬ জুন তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর দুই দিন পর ৯ জুন তার স্ত্রী-সন্তানদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সূত্র। কিন্তু তার এই নোটিশ প্রদান এবং জব্দ হওয়া সম্পদের তথ্য যাচাইবাছাইয়ে জন্য গত কয়েকদিন ধরে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের কারও অবস্থান নিশ্চিত হতে পারছেন না দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। তিনি পরিবারসহ সিঙ্গাপুর বা দুবাই গেছেন, নাকি ঢাকাতেই আছেন এ তথ্য কেউই দিতে পারছে না।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দফায় বেনজীর পরিবারের প্রায় ৬২১ বিঘা জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছে আদালত। বেনজীর ছাড়াও এসব জমির মালিক তার স্ত্রী জীশান মীর্জা, তিন মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর, তাহসিন রাইশা বিনতে বেনজীর ও জারা জেরিন বিনতে বেনজীর এবং স্বজন আবু সাঈদ মো. খালেদ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, সপরিবারে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে না পেলেও অনুসন্ধান কার্যক্রম থেমে থাকবে না।

তবে বিভিন্ন নথিপত্র ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ায় বেনজীরের অনেক সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এখন তিনি দেশে না বিদেশে তা নিশ্চিত হতে তারা কাজ করছেন এবং বিভিন্ন দফতরে চিঠি পাঠাচ্ছেন। গত ২৮ মে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মীর্জা ও মেয়েদের তলবের চিঠি পাঠানো হয়। দুদকের কমিশনার মো. জহুরুল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, আইন অনুযায়ী যা হওয়ার তাই হবে। তারা যদি যোগাযোগ না করে তাও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অনেক জায়গায় তো অনেক লোককে পাওয়া যায় না, তাই বলে তো আইন বসে থাকে না। দুদক জানায়, সাবেক আইজিপি বেনজীর পরিবারের দুর্নীতি অনুসন্ধানে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন- সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুদক কর্মকর্তারা বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে ৬২১ বিঘা জমির সন্ধান পেয়েছে। এ ছাড়া স্ত্রী ও এক মেয়ের নামে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে চারটি ফ্ল্যাট আছে। ফ্ল্যাটগুলোর মোট আয়তন ৯ হাজার ১৯২ বর্গফুট।

এই চার ফ্ল্যাট কেনা হয়েছিল একদিনে। অর্থাৎ গত বছরের ৫ মার্চে। ফ্ল্যাটগুলোর দাম দেখানো হয় মাত্র ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। গত ২৬ মে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দ (ক্রোক) ও অবরুদ্ধের আরেকটি আদেশ দেন ঢাকা মহানগর আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। এই আদেশে স্থাবর সম্পদের মধ্যে ২৭৬ বিঘা জমির কথা বলা হয়। একই আদালত ২৩ মে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা আরও প্রায় ৩৪৫ বিঘা জমি এবং ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছিল। সূত্র জানায়, বেনজীর পরিবার ও তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে পাওয়া ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অনেকগুলো ফাঁকা করা হয়েছে। হিসাব ফ্রিজের তথ্য হয়তো আগেই টের পেয়েছিলেন তিনি।

অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ কার্যকরের আগেই আমানত হিসাব থেকে নগদ টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। দুই দফায় আদালতের আদেশে বেনজীর পরিবারের যেসব সম্পদ পাওয়া গেছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমির মালিক বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জা। তার নামে প্রায় ৫২১ বিঘা জমি খুঁজে পেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। বাকি ১০০ বিঘা বেনজীর, তার তিন মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর, তাহসিন রাইশা বিনতে বেনজীর ও জারা জেরিন বিনতে বেনজীর এবং স্বজন আবু সাঈদ মো. খালেদের নামে।

দুদক সূত্র বলছে, নতুন করে পাওয়া ২৭৬ বিঘা জমির পুরোটাই বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে। জমিগুলো মাদারীপুরের সাতপাড় ডুমুরিয়া মৌজায়। আইজিপি থাকা অবস্থায় ২০২১ ও ২০২২ সালের বিভিন্ন সময় ১১৩টি দলিলে এসব জমি কেনা হয়েছে। এসবের দলিলমূল্য দেখানো হয়েছে মোট ১০ কোটি ২২ লাখ টাকা। ফলে বিঘাপ্রতি দাম পড়েছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এর আগে খোঁজ পাওয়া ৩৪৫ বিঘা জমির দলিলমূল্য দেখানো হয়েছে ১৬ কোটি ১৫ টাকার কিছু বেশি। বেনজীর আহমেদ পুলিশে চাকরিরত থাকার সময় তার স্ত্রী জীশান মীর্জা কোন পেশায় ছিলেন তা জানা যায়নি। তবে সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর বেনজীর এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেন, তার স্ত্রী ও সন্তানদের মৎস্য খামার রয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের শতভাগ মালিকানায় থাকা সাভানা ন্যাচারাল পার্ক, সাভানা ইকো রিসোর্ট ও একটি শিশির বিন্দু নামের প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। আরও ১৫টি প্রতিষ্ঠানে থাকা বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের শেয়ার জব্দের আদেশও দেওয়া হয়েছে। তাদের শেয়ার রয়েছে- নর্থ চিকস রংপুর, নর্দার্ন বিজনেস অ্যাসোসিয়েট, সেইন্ট পিটার্স স্কুল অব লন্ডন, স্টিলথ ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলা টি ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি, ডেল্টা আর্টিসান, ইস্ট ভ্যালি ডেইরি, গ্রিন মাল্টিমিডিয়া, কমিউনিটি ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট, সেন্টার ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ল এনফোর্সমেন্ট রিসার্চ ফাউন্ডেশন, পুলিশ ট্রাস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাক্ট, পুলিশ ট্রাস্ট সার্ভিস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট, পুলিশ ট্রাস্ট কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং সাউদার্ন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ নামের প্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জে ৮৩টি দলিলে প্রায় ৩৪৫ বিঘা জমি রয়েছে বেনজীর পরিবারের।

এর মধ্যে বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে ২৪৫ বিঘা জমি রয়েছে। বেনজীরের নিজের নামে জমি কম, ২৩ বিঘা। বাকি প্রায় ৭৯ বিঘা জমি রয়েছে তার তিন মেয়ে ও কয়েকজন স্বজনের নামে। দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা, কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকত ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে জমি কেনা হয়েছে। জমিগুলোর মোট দলিলমূল্য দেখানো হয়েছে ১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকার কিছু বেশি। আর বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে জমি কেনা হয়েছে সাউদার্ন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা অংশীদার পরিচয়ে।

বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠার পর গত ২২ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানিয়েছিলেন, তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধানে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরদিন ২৩ এপ্রিল হাই কোর্ট এক আদেশে বেনজীরের বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অগ্রগতির বিষয়টি হলফনামা আকারে দুই মাস পর জানাতে দুদককে নির্দেশনা দেয়। বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments