আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ দেশজুুড়ে বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৬২ হাজার ১৯৯ জন। ডেঙ্গুর থাবায় প্রাণ হারিয়েছে ৩০০ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সিরা। একইভাবে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে এই বয়সি রোগীরাই। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ইমেরিটাস ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, তরুণরা তুলনামূলক ডেঙ্গুজ্বরে বেশি আক্রান্ত হয়। কারণ বাড়িতে যদি মশা না-ও থাকে তবু পড়াশোনার জন্য কিংবা কাজে বা ঘুরতে বাইরে বেশি থাকায় মশা কামড়ানোর ঝুঁকি থাকে। এভাবে তরুণরা বেশি আক্রান্ত হয়। ধরন বদলে জটিল হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু।
অনেক রোগীই দ্রুত শকে চলে যায় এবং বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা যায়। ফলে বেশি আক্রান্ত হওয়ায় তরুণদের মৃত্যুহারও বেশি। শিশু ও বয়স্ক রোগীদের ডেঙ্গু হলে ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা, জ্বরের সঙ্গে পাতলা পায়খানার মতো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত টেস্ট করতে হবে। ডেঙ্গু পজিটিভ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দোকান থেকে নিজে নিজে ওষুধ কিনে সেবন করা যাবে না। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে পানি, জুস, তরলজাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানা যায়, গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৮২ জন, মারা গেছে ৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৭৬ জন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা এবং একজন ময়মনসিংহের বাসিন্দা। গত অক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৬১ হাজার ৮১৭ জন। এর মধ্যে ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সি রোগী আছে ৮ হাজার ২১৬ জন, ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সি রোগী ৯ হাজার ৫৪৫ জন, ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সি রোগী ৮ হাজার ৭৩১ জন। সব মিলিয়ে ১৬ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ২৬ হাজার ৪৯২ জন। এ সময়ে ডেঙ্গুর থাবায় প্রাণ হারিয়েছে ২৯৭ জন। এর মধ্যে ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সি রোগী আছে ১৬ জন, ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সি রোগী আছে ২৯ জন, ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সি রোগী আছে ৩০ জন। সব মিলিয়ে ১৬ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৭৫ জন।
এ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে অক্টোবরে। এ মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩০ হাজার ৮৭৯ জন, মারা গেছে ১৩৪ জন। এ বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ১ হাজার ৫৫ জন, মৃত্যু হয় ১৪ জনের; ফেব্রুয়ারিতে ভর্তি হয় ৩৩৯ জন, মৃত্যু হয় তিনজনের; মার্চে রোগী ছিল ৩১১ জন, মৃত্যু পাঁচজনের; এপ্রিলে আক্রান্ত ৫০৪ জন, মৃত্যু দুইজনের; মে মাসে আক্রান্ত ৬৪৪ জন, মৃত্যু ১২ জনের; জুনে আক্রান্ত ৭৯৮ জন, মৃত্যু আটজনের। বছরের মাঝামাঝিতে জুলাই মাস থেকে রোগী বাড়তে থাকে; ছাড়িয়ে যায় দুই হাজারের ঘর। এ মাসে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৬৯ জন, মৃত্যু হয় ১২ জনের। আগস্টে কয়েক গুণ বেড়ে রোগী হয় ৬ হাজার ৫২১ জন, মৃত্যু ২৭ জন। আর আগস্টের তুলনায় তিন গুণ বেশি রোগী সেপ্টেম্বরে শনাক্ত হয়, মৃত্যুও হয় তিন গুণ বেশি। সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ১৮ হাজার ৯৭ জন, মারা গেছে ৮০ জন।