আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে কালবৈশাখী ঝড়। হবিগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, নিকলী, কুমিল্লা, ময়মনসিংহে গতকাল রবিবার বিকাল থেকে ঝড় বয়ে যায়। পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ ঝড় ছয় দিন অব্যাহত থাকতে পারে। সাত বিভাগে কালবৈশাখী ঝড়ের তিন দিনের সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিকে আজ সোমবার থেকে আগামী ১০ দিন বৃষ্টিপাতে সর্বকালের রেকর্ড ভাঙার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়াডটকম নামে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ওয়েবসাইট। এছাড়া ভারি বৃষ্টিপাতে সিলেট বিভাগের নদনদীগুলোর উপকূলবর্তী এলাকাগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল রবিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ ডিগ্রির উপরে। তবে ঢাকাসহ বেশির ভাগ অঞ্চলে তাপমাত্রা সহনীয় রয়েছে। কোনো কোনো অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টি বয়ে গেলেও কোথাও কোথায় আবার খরতাপে পুড়ছে। গতকাল রবিবার আবহায়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত কালবৈশাখী ঝড়ের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, রবিবার বিকাল ৪টা থেকে পরবর্তী সময় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে পশ্চিম বা উত্তর পশ্চিম দিক থেকে দমকা হাওয়াসহ কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যেতে পারে। এসময় কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত ও বিচ্ছিন্নভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
জলবায়ু ও আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, বিশ্বের প্রধান প্রধান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো আজ ৬ মে থেকে ১৪ মে পর্যন্ত সম্ভাব্য মোট বৃষ্টিপাতের যে পরিমাণ নির্দেশ করছে সেই পরিমাণ বৃষ্টিপাত হলে তা বাংলাদেশে মে মাসে সংগঠিত মোট বৃষ্টিপাতের সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করতে পারে। বিশেষ করে বরিশাল, খুলনা ও ঢাকা বিভাগের উপরে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণের দিক থেকে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, আমেরিকা ও কানাডার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল থেকে পাওয়া ১০ দিনের বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে ২৫০ থেকে ৩৫০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নির্দেশ করা হয়েছে বরিশাল, খুলনা ও ঢাকা বিভাগে বিশেষ করে ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, বরিশাল, ও বরগুনা জেলাগুলোর ওপরে। এছাড়া সোমবার থেকে সিলেট বিভাগের নদনদীগুলোর উপকূলবর্তী এলাকাগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার পূর্বাভাসে বলা হয়, রবিবার ময়মনসিংহে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৮৩ মিলিমিটার। আর নেত্রকোনায় ৬৭, নিকলীতে ২৯, সিলেটে ৩৪, কুমিল্লায় ৩১, কক্সবাজারে ৮, শ্রীমঙ্গলে ১১ এবং বগুড়ায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবাহওয়া অধিদপ্তর।
এছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হালকা বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পরবর্তী সময় ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৫৬ শতাংশ। এছাড়া রাজশাহী ও ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৮, কুমিল্লায় ৩৮ দশমিক ৬, খুলনায় ৩৭, কুমারখালীতে ৩৮ দশমিক ৬, বরিশালে ৩৬ দশমিক ২, চট্টগ্রামে ৩৩ দশমিক ৬, টাঙ্গাইলে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অধিকাংশ জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।