আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ এক দশক ধরে কানাডার নেতৃত্ব দেওয়া প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার অটোয়ায় নিজ বাসভবনের বাইরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।দলের অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মুখে এই সিদ্ধান্ত নেন ট্রুডো। কিন্তু একজন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ এমন সংকটে পড়লেন কীভাবে? ট্রুডোর জনপ্রিয়তা কেন এত নিম্নমুখী হলো, তা নিয়ে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
পরিবেশ নীতি: পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে ট্রুডোর লিবারেল পার্টি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। জলবায়ু সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ ওঠে। ক্রমবর্ধমান জলবায়ু দুর্যোগ পরিস্থিতি তার ‘পরিবেশবান্ধব’ নেতৃত্বের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করে। উর্ধ্বমুখী ব্যয়: ২০২৪ সালে কানাডায় মুদ্রাস্ফীতি জনজীবনে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং আবাসন ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। ট্রুডোর সরকার এই সংকট মোকাবিলায় কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।
ফেডারেল বাজেট: ফেডারেল বাজেট প্রস্তাব তার নিজ দল এবং বিরোধী পক্ষ উভয়ের কাছ থেকে সমালোচিত হয়। বাজেট প্রস্তাবে প্রগতিশীল গোষ্ঠীর চাহিদা উপেক্ষিত হয়েছে বলে মনে করা হয়। এটি ট্রুডোকে জনগণের সঙ্গে ‘সম্পর্কহীন’ একজন নেতা হিসেবে চিত্রিত করেছে। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা: প্রদেশগুলোর সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা তহবিল নিয়ে আলোচনা করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য ট্রুডোর সরকার সমালোচিত হয়েছে। এই বিষয়টি স্বাস্থ্যসেবা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সঙ্গে তার সরকারের সম্পর্ক দুর্বল করেছে।
জনপ্রিয়তা হারানো: ২০২৪ সালের জুনে টরন্টোতে একটি বিশেষ নির্বাচনে লিবারেল পার্টি তাদের সবচেয়ে নিরাপদ একটি আসন হারায়। অক্টোবর মাসে লিবারেল পার্টির ২০ জনের বেশি আইনপ্রণেতা ট্রুডোকে চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী পদে না দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন। বর্তমানে হাউজ অব কমন্সে লিবারেলদের আসন সংখ্যা ১৫৩। সরকারে ভাঙন: কয়েক সপ্তাহ আগে অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগ করেন। ট্রুডো তাকে কম গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ নিতে বলার পর তিনি পদত্যাগ করেন। ফ্রিল্যান্ড প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের সময় কানাডার প্রধান বাণিজ্য আলোচক ছিলেন। ট্রুডোর অন্যতম বিশ্বস্ত সহযোগীও ছিলেন তিনি। তবে বাজেট এবং সম্ভাব্য মার্কিন শুল্ক নিয়ে মতবিরোধ তার পদত্যাগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সম্পর্ক: নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানিকৃত সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। এই শুল্ক মাদক ও অভিবাসী নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে চাপ তৈরি করবে। এটি কানাডার অর্থনীতিতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে এবং আরও দুর্বল করতে পারে ট্রুডোর জনপ্রিয়তাকে।