আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ চার দিনের জাতিসংঘ জলবায়ু অভিযোজন সম্মেলন ‘জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) এক্সপো-২০২৪’ আজ ঢাকায় শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনায় দেশের সফলতা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা হবে এই সম্মেলনে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এই নবম ন্যাপ এক্সপোর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলন চলবে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন্স অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (ইউএনএফসিসিসি) আওতায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিশেষজ্ঞ গ্রুপ ও বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
এতে উপস্থিত থাকবেন ইউএনএফসিসিসি’র এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি সাইমন স্টিয়েল। এ উপলক্ষে বিআইসিসিতে গতকাল রবিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম সফল দেশ হিসেবে তথা রিজিলিয়েন্ট কান্ট্রি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জলবায়ু অভিযোজনে সাফল্যের চিত্র বিশ্বের কাছে তুলে ধরা হবে। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২২ থেকে ২৫ এপ্রিল বিআইসিসিতে ন্যাপ এক্সপো-২০২৪ অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ন্যাপ এক্সপোতে অংশ নিতে ১০৪টি দেশের ৩৮৩ জন নিবন্ধন করেছেন, যার মধ্যে ১১৪ জন বাংলাদেশি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ, এনজিও প্রতিনিধি, শিক্ষার্থীসহ ৫৫০ জন অংশ নিবেন। ইউএনএফসিসিসিতে এ পর্যন্ত ৫৩টি দেশ জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) দাখিল করেছে। এ সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের অভিযোজন কার্যক্রম সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় থেকে সবাই পারস্পরিকভাবে উপকৃত হতে পারবে।
পরিবেশমন্ত্রী জানান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে জলবায়ু সহিষ্ণু অবস্থায় উত্তরণের জন্য ২০০৯ সালে নিজস্ব অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠা করে, যা বিশ্বে বিরল একটি উদ্যোগ। আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে এ তহবিলে এই পর্যন্ত ৪৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এছাড়া সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর জলবায়ু অভিযোজনে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, ন্যাপ এক্সপো একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম যেখানে বিভিন্ন দেশ, সংস্থা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা ন্যাপ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করে। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা, সর্বোত্তম অনুশীলন, বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ, চাহিদা এবং ন্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত প্রদত্ত এবং প্রাপ্ত সহায়তা বিষয়ক তথ্য নিয়ে আলোচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এবং বিভিন্ন দেশের ন্যাপসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতির মূল্যায়ন করার সুযোগ তৈরি হবে।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর ন্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য জিসিএফসহ অন্যান্য জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থায়ন নিশ্চিতের লক্ষ্যে এটি একটি গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম। এই এক্সপোতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ন্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত গ্যাপ এবং চাহিদা চিহ্নিতকরণের জন্য প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সেশন আয়োজন করা হয়েছে। ‘মোবিলাইজিং ডোমেস্টিক ক্লাইমেট ফাইন্যান্স : এক্সপেরিয়েন্স অব বাংলাদেশ’ সেশনে নিজস্ব জলবায়ু ফান্ড বা ট্রাস্ট ফান্ড নিয়ে আলোচনা করা হবে।
‘অ্যাডভান্সমেন্ট অব ন্যাশনাল ক্লাইমেট প্ল্যান অব বাংলাদেশ’ সেশনে বাংলাদেশের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ২০২২-২০৫০ প্রণয়ন করেছে। জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় ১১টি ক্লাইমেট স্ট্রেসড এরিয়াতে ৮টি ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরের জন্য ১১৩টি অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম চিহ্নিত করা হয়েছে। ন্যাপ সম্মেলনে থাকবে ২৩টি স্টল। যেখানে বিভিন্ন দেশের অভিযোজনমূলক কর্মকাণ্ড প্রদর্শিত হবে। এছাড়া ৪ দিনে ১৬টি সেশনে বিশেষজ্ঞরা ট্রান্সফরমেশনাল অ্যাডাপটেশন, ফিন্যান্সিয়াল মেকানিজম, অ্যাডাপ্টেশন অ্যাক্টিভিটি মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন টুলস, জেন্ডার রেস্পন্সিভ অ্যাডাপটেশন প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করবেন।
বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ করা ১০টি স্টলে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং, পাহাড়ি অঞ্চলে সোলার এনার্জির মাধ্যমে পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা, জলবায়ু সহিষ্ণু বীজ, প্রাণিসম্পদ সংরক্ষণ এবং অন্যান্য কৃষি কার্যক্রম সংক্রান্ত বিষয়, অভিযোজন কর্মকাণ্ডের সমর্থনে ডেল্টা প্ল্যানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, জলবায়ু অভিযোজনের জন্য সাইক্লোন শেল্টার, মুজিব কিল্লা, রাস্তাঘাট, কালভার্ট নির্মাণ, জলবায়ু সহিষ্ণু নগর ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু উদ্বাস্তু ইত্যাদি বিষয় প্রদর্শন করা হবে এই এক্সপো।