
গুরুতর অভিযোগের রাজ্জাকের লঘু শাস্তি
———————————
ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগে শাস্তি হিসেবে সাভার উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে নারায়নগঞ্জে বদলি।
জাভেদ মোস্তফা 🇧🇩
অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে সাভার উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক আগারগাঁও এলজিইউির কার্যালয়ের সিনিয়ার সহকারী প্রকৌশলী (প্রশাসন) মো: শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি পত্রে শাস্তি হিসেবে সাভার থেকে নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় বদলী করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন) কাজী সাইফুল কবীর এবং সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী (প্রশাসন) মোঃ শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এই পত্রের মাধ্যমে জনস্বার্থে এই ঘুষখোর প্রকৌশলীকে বদলির আদেশ জারি করে অবিলম্বে তা কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তাকে উক্ত উপজেলায় যোগদানের কথা থাকলেও তিনি আজও বহাল তবিয়তে সাভার উপজলা অফিসে কাজ করছেন। অফিসে গিয়ে দেখা যায় তিনি সাইটের কথা বলে অফিসের বাহিরে থাকেন সব সময়। প্রতিদিন তিনি ৩ টার পর অফিসে আসেন।
এলজিইডির স্থানীয় ঠিকাদাররা জানান, আব্দুর রাজ্জাক একজন বড় মাপের ঘুষ খোর এবং কমিশন বানিজ্য করে থাকেন। তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামিলীগ সরকারের আমলের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের সহচর হিসেবে উপ সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে সাভারে যোগদান করেছিলেন। মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বিভিন্নভাবে ঠিকাদারদের হয়রানি করেন ও তার মনোনীত প্রতিষ্ঠান থেকে মালামাল ক্রয়ের জন্য চাপ দিয়ে থাকেন। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঠিকাদার রা বেশ কয়েকটি অভিযোগ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে আবেদন করেন।
এর আগে মেসার্স আরাফ ইন্টারন্যাশনাল নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্যাডে আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী বরাবর অভিযোগ করেন হাসান আহমেদ লিটন। অভিযোগে হাসান আহমেদ উল্লেখ করেন, উপ-সহকারী প্রকৗশলী আব্দুর রাজ্জাক আমাকে তার মনোনিত কোম্পানী থেকে কংক্রিট রেডিমিক্স নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। ওই কোম্পানী ব্যতীত অন্য কোন কোম্পানী থেকে কংক্রিট রেডিমিক্স ব্যবহার করিয়া কাজ বাস্তবায়ন করিতে দিবেন না। পরে জানতে পারলম ঐ রেডিমিক্স কোম্পানী থেকে আব্দুর রাজ্জাক ১৫% হারে কমিশন গ্রুহণ করেন।
এছাড়া ক্রিয়েটিভ ট্রেড সল্যুশন নামক আরেকজন ঠিকাদার তার প্রতিষ্ঠানের প্যাডে প্রধান প্রকৌশলী বরাবর করা অন্য একটি অভিযোগে উল্লেখ করেন উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক তার মনোনীত কোম্পানী থেকে ইউনি ব্লক নেয়ার জন্য ঠিকাদারকে চাপ প্রয়োগ করেন এবং অন্য কোম্পানীর ইউনিব্লক ব্যবহার করলে কাজটি বাস্তবায়ন করিতে দিবেন না বলেও হুমকি দেন। পরে ওই ঠিকাদার জানতে পারেন আব্দুর রাজ্জাক তার মনোনীত কোম্পানীর ইউনিব্লক ব্যবহার করালে ১০% হারে কমিশন গ্রহণ করেন।
অন্যদিকে মেসার্স রাফি এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার প্রধান প্রকৌশলী বরাবর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে বিলের ১৫ % ঘুষের জন্য চাপ প্রয়োগের অভিযোগ করেন। অফিস থেকে জানানো হয়, গত ৩০ নভেম্বর এই বদলীর আদেশ আমরা পেয়েছি, তবে তিনি এখনও অফিস করছেন। জানতে চাইলে সাভার উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মাঈন উদ্দিন আরো বলেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাককে বদলি করা হয়েছে এটা সত্য। তবে কি কারনে তাকে বদলি করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি জানেন না। এছাড়া আমার কাছে কেউ তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগও করেনি।
অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশী মুহাম্মদ বাচ্চু মিয়ার অধিনস্ত এলকেএস প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আনিসের মাধ্যমে বদলী ঠেকানোর জন্য তদবির করছেন।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, আমি এখনও বদলির অর্ডার অফিসিয়ালি হাতে পাইনি। তাছাড়া উপ-সহকারী প্রকৌশলীর সাথে আমার কোন যোগাযোগ নাই। আমার যোগাযোগ হয় উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে।
কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাকের মুঠো ফোনে একাধিকবার ফোনের পর আজ মঙ্গলবার ১১ টায় তিনি বলেন, আমার বদলির আদেশ হয়েছে। তবে আমি এখনও সাভারে অফিস করছি। তার বিরুদ্ধে ঠিকাদারদের অভিযোগ সম্বন্ধে তিনি বলেন, ঐ বিষয় কোন তদন্ত কমটি হয়েছে কি না আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে আগারগাঁও এলজিইউির সিনিয়ার সহকারী প্রকৌশলী (প্রশাসন) মো: শফিকুল ইসলাম সকালে জানান, এ ব্যাপারে আমি শুধু উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের আদেশে পত্র সহি করেছি। কেন তার বদলি হয়েছে আমার জানা নেই।
