Saturday, November 23, 2024
Homeজাতীয়খোদ পুলিশ সদস্যদের ক্ষোভ: কাফী -জামান সিন্ডিকেটের কারণে সাভারে ঝড়ে পড়লো অর্ধশতাধিক...

খোদ পুলিশ সদস্যদের ক্ষোভ: কাফী -জামান সিন্ডিকেটের কারণে সাভারে ঝড়ে পড়লো অর্ধশতাধিক প্রাণ

জাভেদ মোস্তফা
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পর সাভারে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৫। প্রতিদিনই পালা দিয়ে বাড়ছে এই মৃত্যুর তালিকা। গত ১২ ঘন্টায় কেবলমাত্র সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৪ শিক্ষার্থীসহ গুলিবিদ্ধ ৬ জন। গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে পুলিশ গুলি ছুঁড়ে পাখির মতো হত্যা সহ আন্দোলনের সূচনা থেকে এ পর্যন্ত কেবল সাভারে মারা যান ছাত্র-ছাত্রী,অভিভাবক থেকে শুরু করে ৭০ জনের বেশি মানুষ। গুলিবিদ্ধ হন তিন ’শয়ের অধিক। যাদের কমপক্ষে ৬০ জন পঙ্গু হয়েছেন চিরতরে।
একদিনে এত মৃত্যুর ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা সাভার। পাড়া মহল্লায় উঠেছে কান্নার রোল। ক্ষোভে ফুঁসে উঠেন সাধারণ মানুষ। এর জের ধরে পুড়িয়ে দেয়া হয় ঢাকা উত্তরের সাভার,আশুলিয়া ও ধামরাই থানা। পুলিশের পোশাক পড়া দু’জনকে মেরে ঝুলিয়ে দেয়া হয় আশুলিয়ার বাইপাইল পদচারী সেতুতে। পুড়িয়ে দেয়া হয় আরো দু’জনকে। তাদের একজনের (এস আই রফিক) পরিচয় ছাড়া আর কারো পরিচয় এখনো মেলেনি। টানা দু’দিন এভাবেই ঘটনাস্থলে লাশগুলো পরে থাকলেও কেউ তা উদ্ধার করতে পর্যন্ত যান নি। পরে নিখোঁজদের স্বজনরাই সেই মরদেহ গুলো নিয়ে যান। তবে পুড়ে যাওয়া হতভাগ্য মানুষদের পরিচয় এখনো সনাক্ত হয়নি।
এখন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে গোটা সাভার। সংকট মোকাবেলায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব মেট্রোপলিটন, জেলা, নৌ, রেলওয়ে ও হাইওয়ে থানার কর্মকর্তা ও ফোর্সকে নিজ নিজ পুলিশ লাইনসে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে থানাগুলো এখনো ফাঁকা। পোড়া গন্ধে ভরা এখনও । সেনা প্রধান বলেছেন প্রতিটি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার হবে। তবে কেন পুলিশের প্রতি এত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ? আর হাসিনা সরকারের পতনের পরই বা কেন এত মৃত্যু ু? একদিনে সাভারে এত মানুষকে হত্যাকান্ডের দায় কার- এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।
সাভারে একদিনে সর্বোচ্চ এত মানুষের মৃত্যুর জন্যে সাভার,আশুলিয়া ও ধামরাই থানার (ঢাকা উত্তর) আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিসিএস ২৯ ব্যাচের কর্মকর্তা ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, (ক্রাইম এন্ড অপস্ ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ) আবদুল্লা হিল কাফী, ও ২০০৩ ব্যাচের কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামানকে দায়ী করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতারা এবং ক্ষুব্ধ পুলিশ সদস্যরাও বলেছেন,কমান্ডিং অফিসাররা নিজেদের পেশাদারিত্ব ভুলে গিয়েছিলেন। ছাত্রলীগ করে আসা এসব কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তির কারণেই আজ পুলিশ সদস্যরা বিপন্ন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল ও সাব্বির রহমান লিওন বলেছেন,পুলিশ সুপার পদে পদন্নোতিপ্রাপ্ত আবদুল্লা হিল কাফী ও সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামানের বাড়াবাড়ির কারনেই সাভারে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে বিস্ফোরণমুখ। পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হয়ে নির্বিচারে গুলি ছুঁড়তে হয়। যে কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষের করুণ মৃত্যুু দেখতে হয় সাভারকে।
বিএনপির সাবেক নেতারা বলছেন,সাভার এখন কাঁদছে। শত শত মানুষ গুলিবিদ্ধ। প্রতিদিন নেতাকর্মি ও শিক্ষার্থীদের জানাযা হচ্ছে। পুলিশ সুপার আবদুল্লা হিল কাফী ও সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামানের বাড়াবাড়ি কত মায়ের বুক খালি করেছে তা বলে শেষ করা যাবে না। তবে কমান্ডিং অফিসার হয়েও পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত আবদুল্লাহ হিল কাফী ও সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামানের অযোগ্যতা,নেতৃত্বে দূর্বলতা,অদক্ষতা,পরিস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থতা,অদূরদর্শিতা,পুলিশ হয়েও রাজনৈতিক কর্মিদের মতো আচরণ,সর্বোপরি সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন খোদ পুলিশ কর্মকর্তারাই।
সে দিন যেভাবে অশান্ত হয়ে উঠলো সাভার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে গত ১৮ জুলাই শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচীতে সাভারে যোগ দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেদিন শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে আওয়ামী লীগ,যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মিদের লেলিয়ে দেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লা হিল কাফী ও সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় পুলিশের এপিসির ওপরে বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে আছেন পরে আছেন মিরপুরের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) মেধাবী শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন। সেই এপিসির পাশেই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। আন্দোলন মোকাবেলা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়ে সেদিন কাফীর নেতৃত্বে পুলিশ যথাযথ দায়িত্ব পালন না করে ছাত্রলীগের গুন্ডাদের লেলিলে দেয়। আতিকের অস্ত্রের লাইসেন্স নেই। প্রকাশ্যে এভাবে অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের গুলি করলেও তাদের বিররুদ্ধ কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি ছুঁড়ে ঝাঁঝড়া করে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের বুক। শহীদ শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনের মৃত্যুুর পর থেকেই মূলত ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে সাভারে।
হাসিনা পদত্যাগ আগেই টের পেয়েছিলেন কাফী,আতœগোপনে থেকেই দিয়েছিলেন গুলির নির্দেশ। হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতির সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন সিরাজগঞ্জের সন্তান কাফী। সেই সুবাদে পুলিশ প্রশাসনে হয়ে উঠেন একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। সন্ধার পর কাফীর ঠিকানা ছিলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বাসা। সেখান থেকেই পুলিশের আইজি থেকে উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ,বদলী,পদন্নোতি থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ নানা সিদ্ধান্তে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থেকে রাতারাতি নিজের প্রশাসনেই অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন কাফী। প্রাইস পোষ্টিং হিসেবে ঢাকা জেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলায় যোগ দেন ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর। পেশাদারিত্ব নয় কেবলমাত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রভাবেই দু’বার বাগিয়ে নেন ‘প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক’ (পিপিএম)। অন্যান্য দিন কাফী সাভারে সরাসরি আন্দোলন দমন ও নিজেই অস্ত্র হাতে গুলিবর্ষনে যোগ দিলেও হস্যজনক কারণে আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্টে ৫ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিন কাফী সাভারে যাননি।
সূত্রমতে হাসিনা সরকার পদত্যাগ করতে পারে- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্টজন হিসেবে আগাম বার্তা পেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও তার ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতির সাথে নিরাপদ অবস্থানে চলে যান কাফী। সেখান থেকেই ইউনিট কমান্ডার হিসেবে ছাত্র জনতার প্রতি উপর্যুপরি গুলি বর্ষনের নির্দেশ দেন কাফী।
কাফীকে নিয়ে পুলিশে ক্ষোভ
‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিন নিজেকে সেফটি জোনে রেখে মোবাইলেই অপারেশন পরিচালনা করেন কাফী। নির্দেশ দেন ছাত্র জনতার ওপর গুলি ছোঁড়ার। সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামান। দুপুরেই ঘোষনা আসে সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তারপর শুরু হয় পুলিশের পৈশাচিকতা। হাজার হাজার রাউন্ড গুলি করে এক পর্যায়ে পুলিশ ক্রমশ: কোনঠাসা হয়ে পড়ায় মৃত্যুর ঝুঁকির মুখোমুখী হয় সাভার মডেল থানায় অবস্থান নেয়া আড়াই’শ পুলিশ। সেদিন বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা থানা ঘিরে ফেললেও কারো সহযোগিতা পাননি। সেনাবাহিনীর কনভয় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বে আছে- এমন তথ্য দিয়ে বিপদাপন্ন পুলিশ সদস্যদের আশ্বস্ত করা হলেও চার ঘন্টাতেও তাদের উদ্ধার করতে কেউ যায়নি।
প্রাণ হাতে নিয়ে থানা থেকে কোনক্রমে পালিয়ে আসা উপ-পরিদর্শক পদের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘কাফী স্যার আগেই টের পেয়েছিলেন। কারণ স্যারের সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভালো সম্পর্ক। অনেকটা ঘরের ছেলের মতো। তিনি ছিলেন আমাদের ইউনিট কমান্ডার। নিজে নিরাপদে থেকে আমাদের ঠেলে দিয়েছেন ঝুকিঁর মধ্যে। আমাদেরও তো সর্তক করতে পারতেন। উল্টো সেটা না করে তার অপকর্মের খেসারত গুনতে হয়েছে আমাদের সকলকে। নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে মারা হয়েছি আমাদের প্রিয় সহকর্মিদের। পুলিশের এমন কিছু হারামী কর্মকর্তাদের জন্যেই আজ আমাদের মানুষ পাক হানাদার বাহিনীর সাথে তুলনা করেছে। অথচ জীবনের কঠিন সময়ে আমাদের একা রেখে নিজেই কাফী স্যার ছিলেন নিরাপদে।এরা আসলেই ভুয়া’।
নেপথ্যে কাফি – জামান সিন্ডিকেট
ঢাকা উত্তর ঘিরে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নোতি প্রাপ্ত আবদুল্লা হিল কাফী ও সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামান মিলে সাভারে তৈরি করেছিলেন রাম রাজত্ব। গড়ে তুলেছিলেন সিন্ডিকে প্রাইস পোষ্টিং।মেধা ও যোগ্য পুলিশ কর্মকর্তাদের কোনঠাসা করে মাথায় তুলে রাখতেন দুর্নীতিপরায়ণ পুলিশ কর্মকর্তাদের। পুলিশ সুপারকে বিভ্রান্ত করতে ঢেকে রাখতেন বাহিনীর কিছু সদস্যের অপকর্ম। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে নিতেন আর্থিক সহ নানা রকম সুবিধা।
মামলার ফাঁদে হয়রানী
মামলার ফাঁদে ফেলে পুলিশকে জনগনের মুখোমুখি করতে কাফী – জামান সিন্ডিকেটের তৎপরতা ছিলো বেপরোয়া। নাশকতার অভিযোগে দেড় ডজন মামলা করে নির্বিচারে আসামী করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ি,চাকরিজীবি এমনকি তৈরি পোশাক খাত সংশ্লিষ্টদের। এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ব থেকে বাদ পড়েনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিরা-ও। অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মিকেও এ যাত্রায় মিথ্যা মামলার আসামী করা হয়। টাকা না পেলে সাধারণ মুসুল্লীদের পেলে তাদের জামায়াত শিবির আর ব্যবসায়ি পেলে তাদের বিএনপির তকমা দিয়ে চালান করে দেয়াই ছিলো এই সিন্ডিকেটের লক্ষ্য। এভাবে কাফী – জামান লক্ষ্য ছিলো গ্রেপ্তার বানিজ্য করে অর্থ কামানো। এর অংশ হিসেবে গত ২৭ জুলাই সাভারে সর্ববৃহত একটি তৈরি পোশাক কারখানার ডিজিএম আবু রায়হানকে কাফীর নাম করে নিজের অফিস থেকে তুলে আনেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সাব্বির আহমদে। একজন ঝুট ব্যবসায়ির পক্ষে নিয়ন্ত্রণ নেবার চেষ্টা করেন ওই কারখানা। সেটা না পেয়ে দাবী করেন মোটা অংকের টাকা। সেটাও না পেয়ে নাশকতার মামলার আসামী করে তিনদিন রিম্যান্ডে নিয়ে ডিজিএম আবু রায়হানের জীবনটাকে নরক করে দেয়া হয়। কোন রাজনীতি না করেও সাভারে বাগানবাড়ি রেষ্টুরেন্ট ও ল্যাবজোন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াকিলুর রহমানকে নাশকতার মামলার আসামী করা হয়। এভাবে তৈরি পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট ছাড়াও ব্যবসায়ি, সাংবাদিকসহ সমাজের নানা শ্রেণী পেশার মানুষদের পুলিশদের মুখোমুখি করে তোলে এই সিন্ডিকেট। এছাড়াও সাভারে ক্যাফে মেট্রো নামের একটি রেষ্টুরেন্ট থেকে নেয়া খাবার বাকীতে নিয়ে এখনো শোধ করেনি এই সিন্ডিকেট। এভাবে সমাবেশ প্রতিটি স্তরে মানুষের প্রতি ক্ষোভের সঞ্চার করে এই সিন্ডিকেট।
বিএনপির ধোয়া তুলে বাড়ি বাড়ি হামলা ভাংচুরের নেতৃত্বে কাফী
মত্যুুর এক বছর ৭ মাস ১১ দিন পর বাস পোড়ানোর নাশকতার মামলায় আসামী করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস), পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা বিএনপির প্রয়াত সভাপতি আজগর হোসেনকে। বিএনপি – জামায়াত নেতাদের বাড়ি বাড়ি অভিযানের নামে হামলা ভাংচুর ও সীমাহীন লুটতরাজ চালায় কাফী-জামানের নেতৃত্বে গড়ে তোলা পুলিশের সিন্ডিকেট। এদের মধ্যে সাভার সিটি সেন্টারে থাকা এক বিএনপি নেতার বাড়ি ঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটতরাজ হবে না – এমন শর্তে ৫ লাখ টাকা নেয় কাফী-জামান সিন্ডিকেট।
এ ছাড়াও সাভার পৌর ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও সাভার সিটি সেন্টারের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ওবায়দুর রহমান অভি,সাভার পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুর রহমান,বিএনপি নেতা খোরশেদ আলমের শ্বশুড়বাড়িসহ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মির বাড়িতে চলে নজিরবিহীন লুটপাট ও ভাংচুর। সাভার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আব্বাস উদ্দিন জানান,তাদের এই অপকর্মের মাসুল হিসেবে এখন আমাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়া হচ্ছে। অথচ আমরা সবাই মিলেমিশেই চলতাম। কিন্তু কাফী ও জামান সিন্ডিকেটের পাপের অত্যচারে ফল আজ আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে।
সাংবাদিকরাও রক্ষা পায়নি
সাভারে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কাফী- জামানের নির্দেশে ছোঁড়া বুলেট থেকে রক্ষা পাননি মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সাংবাদিক সৈয়দ হাসিবুন নবী। তিনি জানান, ৫ আগষ্ট পেশাগতত দায়িত্ব পালনকালে এই পুলিশ পরিচয় দেয়া সত্বেও আমাকে কাছ থেকে গুলি করে। এতে আমার সারাদেহে অসংখ্য গুলি লাগে। ডান চোখ গুলিবিদ্ধ হওয়ায় আজ আমি কিছুই দেখতে পারছি না। একই দিন সাভার প্রেসক্লাবে পিওন মনঞ্জয়কে কাছ থেকে গুলি করায় তার ডান হাতটি কেটে ফেলতে হয়। প্রেসক্লাবের পাশে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষনের ক্ষোভে জ্বালিয়ে দেয়া হয় সাভার প্রেসক্লাব। এর আগে ১৭ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কাফীর নেতৃত্বে প্রথম আলো প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বিনা অপরাধের বেদম মারধর করে পুলিশ। গত ১৯ জুলাই সাভার যুগান্তর অফিস ভবনে ঢুকে সাংবাদিকের কেয়ার টেকার হৃদয় খানকে সিকিউরিটি ঘরের ভিতর কাছ থেকে গুলি করা হয়। রুমের দরজা খুলতে দেরী হওয়ায় রুমের জানালা দিয়ে তাকে গুলি করো হয়। এস আই সাব্বির কাফির সির্দেশে তার ওপর তিনটি গুলি বর্ষন করেন। এতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভবনের ভারাটিয়া সহ দুইজন। এভাবে সমাজের নানা শ্রেণীপেশার মানুষের ক্ষোভ পঞ্জিভূত হয়ে এই সিন্ডিকেটের আখড়ায় পরিণত হয় থানা। যার জেরে পুড়িয়ে দেয়া হয় কাফীর কমান্ডে থাকা সাভার-আশুলিয়া ও ধামরাই থানা।
এ ব্যাপারে ঢাকা রেঞ্জের একজন উদ্ধর্তন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আক্ষেপ করে জানান,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ করে আসা কাফী মূলত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও তার ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতির আস্কারায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। আমরা চাইলেও তাকে কিছু করার ক্ষমতা ছিলো না। উল্টো সিনিয়র অফিসার হয়ে আমাদের হয়রানী হতে হতো।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, (ক্রাইম এন্ড অপস্ ও ট্রাফিক, উত্তর বিভাগ)আবদুল্লা াহিল কাফী, ও সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের ফোন দুটি বন্ধ পাওয়া যায়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments