আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ এক দশক ধরে কানাডার নেতৃত্ব দেওয়া প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগের জন্য গত কয়েক সপ্তাহ চাপে থাকার পর সোমবার ৬ (জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন জাস্টিন ট্রুডো। একই সঙ্গে তিনি নিজ দল কানাডার লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব থেকেও সরে দাঁড়াচ্ছেন। এই ঘোষণার মধ্যদিয়ে ট্রুডোর রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘ এক অধ্যায়ের অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
২০১৩ সালে এমন এক সময় তিনি লিবারেল পার্টির দায়িত্ব নিয়েছিলেন, যখন দলটি গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত ছিল। সে সময় কানাডার হাউস অব কমন্সে তৃতীয় অবস্থানে নেমে গিয়েছিল লিবারেল পার্টি। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলে ২০১৫ সালে ক্ষমতায় বসেন ট্রুডো। এরপর থেকে টানা গত নয় বছর ধরে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন লিবারেল পার্টির এই নেতা।
ট্রুডোর পদত্যাগের পর তার জায়গায় দল এবং দেশের প্রধানমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব কার কাঁধে উঠবে, তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছে। ট্রুডোর উত্তরাধিকারী হওয়ার দৌড়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন প্রার্থী আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছেন। সম্প্রতি কানাডিয়ান সংবাদমাধ্যম সিবিসি নিউজ একটি সম্ভাব্য তালিকা প্রকাশ করেছে।
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড
লিবারেল সরকারের একজন পরিচিত মুখ, সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডকে ট্রুডোর প্রধান উত্তরসূরি হিসেবে ভাবা হচ্ছে। ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত ফ্রিল্যান্ড কানাডার অর্থনীতিতে মহামারি-পরবর্তী পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সম্প্রতি প্রকাশ্যে ট্রুডোর সমালোচনা করে পদত্যাগ করেন ফ্রিল্যান্ড। এতে সরকারের ওপর চাপ বেড়ে গিয়েছিল।
মার্ক কার্নি
ব্যাংক অব কানাডা এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি নেতৃত্ব গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তন এবং অর্থনীতি বিষয়ে অভিজ্ঞ কার্নি রাজনীতিতে নতুন মুখ হলেও তার দক্ষতা তাকে নেতৃত্বের দৌড়ে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছে।
আনিতা আনন্দ
কানাডার বর্তমান পরিবহনমন্ত্রী আনিতা আনন্দ একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী নেতা হিসেবে পরিচিত। করোনাভাইরাস মহামারির সময় টিকা সংগ্রহে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা তাকে এই দৌড়ে একটি শক্ত অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শাঁপেন
উদ্ভাবন, বিজ্ঞান ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শাঁপেন একজন ব্যবসায়িক বিশেষজ্ঞ। কুইবেক প্রদেশ থেকে আসা এই নেতা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিতে পারেন।
মেলানি জোলি
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি কানাডার কূটনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত একটি নাম। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ভারত-কানাডা কূটনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তার সক্রিয় ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে।
ডমিনিক লেব্লাঁ
ট্রুডোর ঘনিষ্ঠ মিত্র ডমিনিক লেব্লাঁ একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিক। দীর্ঘ দুই দশকের সংসদীয় অভিজ্ঞতা তাকে নেতৃত্বের জন্য যোগ্য প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ক্রিস্টি ক্লার্ক
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সাবেক প্রধান ক্রিস্টি ক্লার্ক ট্রুডোর অন্যতম সমালোচক হিসেবে পরিচিত। ফরাসি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে তিনি জাতীয় নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সাধারণত অক্টোবরের মধ্যে কানাডায় পরবর্তী ফেডারেল নির্বাচন হতে হবে, তবে সম্ভবত তার আগে আগাম ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে।
পিয়েরে পোইলিভরে
এদিকে, সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হতে পারে লিবারেলরা। আর কানাডার প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন দেশটির কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পোইলিভরে।