আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ এই প্রথম হাত মেলালেন ভারতের দুই ধনকুবের মুকেশ আম্বানি ও গৌতম আদানি। দেশটির মধ্যপ্রদেশে আদানি পাওয়ারের একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের ২৬ শতাংশ শেয়ার কিনেছে আম্বানির রিলায়েন্স। এর ফলে ভারতের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিলিয়নিয়ারের মধ্যে এটাই হতে চলেছে প্রথম কোনো অংশীদারি ব্যবসায়িক উদ্যোগ। খবর ইকোনমিক টাইমসের। চুক্তি অনুযায়ী, আদানির এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে ‘ক্যাপটিভ’ ব্যবহারের জন্য ৫০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ নেবেন আম্বানি। সেই সঙ্গে ‘মহান এনারজেন লিমিটেড’ সংস্থার ৫ কোটি ইক্যুইটি শেয়ার নেবে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ।
৫০ কোটি টাকা মূল্যের এই সহায়ক সংস্থার সম্পূর্ণ মালিকানা রয়েছে আদানি পাওয়ার লিমিটেডের হাতে। মূলত, ক্যাপটিভ জেনারেটিং প্লান্টে উৎপাদিত বিদ্যুতের শেষ ব্যবহারকারীকে ক্যাপটিভ ইউজার বলা হয়। ক্যাপটিভ জেনারেটিং প্ল্যান্ট থেকে উত্পাদিত বিদ্যুৎ স্ব-ব্যবহারের জন্য ক্যাপটিভ ইউজারকে ক্যাপটিভ জেনারেটিং সংস্থাতে অন্তত ২৬ শতাংশের মালিকানা রাখতে হয়।
এক এক্সচেঞ্জ ফাইলিংয়ে আদানি পাওয়ার জানিয়েছে, তাদের মালিকানাধীন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, মহান এনারজেন লিমিটেড, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সঙ্গে ৫০০ মেগাওয়াটের জন্য ২০ বছরের দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করেছে। শিগগিরই মহান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২,৮০০ মেগাওয়াটে পৌঁছবে। এর মধ্যে ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ইউনিট, রিলায়েন্সের ক্যাপটিভ ব্যবহারের জন্য রাখা থাকবে। তবে, রিলায়েন্স কোথায় এই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে চায়, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ইতিমধ্যেই গুজরাট এবং মহারাষ্ট্রে রিলায়েন্সের তেল পরিশোধন এবং পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্সে ক্যাপটিভ ইউনিট রয়েছে। রিলায়েন্স জানিয়েছে, মহান এনারজেন লিমিটেড প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেওয়ার ২ সপ্তাহের মধ্যে লগ্নি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে৷ অনেকেই মনে করেন, ভারতের এক ও দুই নম্বর ধনকুবেরের মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে। সংবাদমাধ্যমেও এই নিয়ে চর্চা কম হয় না। তবে, একমাত্র ক্লিন এনার্জি ক্ষেত্র ছাড়া এই দুই ধনকুবের কোনও ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতায় নেই। আম্বানির ব্যবসা ছড়িয়ে রয়েছে তেল-গ্যাস, রিটেইলস, টেলিকমের মতো ক্ষেত্রে। অন্যদিকে, আদানির মনোযোগ রয়েছে সমুদ্র বন্দর, বিমানবন্দর, কয়লা এবং খনির পরিকাঠামোর দিকে।
২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনকারী সংস্থা হতে চায় আদানি গোষ্ঠী। সোলার মডিউল, উইন্ড টারবাইন এবং হাইড্রোজেন ইলেক্ট্রোলাইজার তৈরির জন্য তিনটি গিগা কারখানা তৈরি করছে আদানি গোষ্ঠী। অন্যদিকে, রিলায়েন্স গুজরাটের জামনগরে চারটি গিগাফ্যাক্টরি তৈরি করছে। সৌর প্যানেল, ব্যাটারি, সবুজ হাইড্রোজেন এবং জ্বালানি ও জ্বালানি সেলগুলোর জন্য একটি করে কারখানা।
সম্প্রতি ৫জি স্পেকট্রাম নিলামে অংশ নিয়েছেন আদানি। অনেকেই ভেবেছিলেন, এই ক্ষেত্রে ভারতের শীর্ষস্থানীয় দুই ব্যবসায়িক নেতার প্রতিযোগিতা দেখা যেতে পারে। কিন্তু, আম্বানি যেখানে জন পরিষেবার স্পেকট্রাম কিনেছেন, আদানি কিনেছেন ২৬ গিগাহার্টজের ব্যান্ডের ৪০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম। এই স্পেকট্রাম পাবলিক নেটওয়ার্কের জন্য নয়। কাজেই এই ক্ষেত্রেও দুই ধনকুবেরের প্রতিযোগিতার জায়গা নেই। বরং এদিন, ভারতের সবথেকে বড় দুই শিল্পগোষ্ঠীকে হাত মেলাতে দেখা গেল।
উল্লেখ্য, আম্বানি ও আদানি উভয়েই ভারতের গুজরাট রাজ্যের বাসিন্দা। দেশটির শীর্ষ ধনীর তালিকায় তাঁদের নাম পিঠাপিঠি থাকে। শুধু ভারতেই নয়, এশিয়ায় শীর্ষ সম্পদশালীর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে পৌঁছানোর জন্য তাঁদের মধ্যে বছরের পর বছর প্রতিযোগিতা হয়।