আলোর যুগ প্রতিনিধিঃ বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। একটি নাম, একটি ইতিহাস, একটি দেশ। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি। বাংলা ও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। হে পিতা, তোমার জন্ম না হলে আমরা বাংলাদেশ পেতাম না। জন্ম হতো না একটি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্রের। সৃষ্টি হতো না স্বতন্ত্র মানচিত্র এবং লাল সবুজ পতাকারও। বাঙালির হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার নেতৃত্ব দিয়েছিলে তুমি। তুমিই তো জাতির পিতা।
তোমার অঙ্গুলি নির্দেশে ৭ কোটি বাঙালি বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে দ্বিধা করেনি। তুমিই ছিলে দিকভ্রষ্ট পথহারা নিরস্ত্র জাতির একমাত্র নির্দেশক, আশা-ভরসার কেন্দ্র স্থল। তোমার সুদূরপ্রসারী বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নামের নতুন একটি জাতিরাষ্ট্র আজ স্বগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। সমগ্র বিশে^র উন্নয়নের রোল মডেলের নাম তোমারই সৃষ্ট বাংলাদেশ। তোমার বেড়ে ওঠার প্রতিটি দিনলিপির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। বাংলাদেশের ইতিহাস মানেই শেখ মুজিবের জীবনের দিনলিপি। কালোত্তীর্ণ সেই মহাপুরুষের আজকের এই শুভ জন্মদিনে সমগ্র জাতির মত অন্তরের অন্তস্থল থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তদানীন্তন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম। তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুন। চার বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তাঁর ডাক নাম ছিল খোকা।
শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গিপাড়ার চিরায়ত গ্রামীণসমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আবেগ-অনুভূতি শিশুকাল থেকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। গ্রামের মাটি আর মানুষ তাঁকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করত। শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজজীবনে তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজাপীড়ন দেখে চরমভাবে ব্যথিত হতেন। গ্রামের হিন্দু, মুসলমানদের সম্মিলিত সম্প্রীতির সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িক চেতনার।
কিশোর বয়সেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রামী জীবনের অভিযাত্রা। তিনি সারাজীবন এ দেশের মাটি ও মানুষের অধিকার আদায় এবং কল্যাণের জন্য সংগ্রাম করেছেন। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য জীবনের ১৪টি বছর পাকিস্তানি কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে বন্দি থেকেছেন, দুইবার ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু আত্মমর্যাদা ও বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের প্রশ্নে কখনো মাথানত করেননি, পরাভব মানেননি।