আরও একটি মাইলফলকে বহুমাত্রীক ব্যাক্তিত্বের অধিকারী ডিআইজি হাবিব

0
490


ডিআইজি হাবিবুর রহমান ও কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র


লেখক:সাংবাদিক জাভেদ মোস্তফা
সম্পাদক:সাপ্তাহিক ‘আলোর যুগ’
মোবাইল :০১৭১১৬৬০৩০৪

সরকারী পোশাকের জালে আবদ্ধ তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা (ডিআইজি) হাবিবুর রহমান। বহুমাত্রীক ব্যাক্তিত্বের অধিকারী এই কর্মকর্তা বর্তমানে ঢাকা জেলা রেঞ্জের গুরু দায়ীত্ব পালন করছেন। কিন্ত তাঁর সকল কাজ দেখে কেউই ভাবতেই পারেন না তিনি কি সত্যিই পুলিশ কর্মকর্তা না জনতার নেতা। সরকারী পোষাকে থেকেও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন একজন সমাজ সেবক হিসেবে। যা গত এক দশকে পুলিশের ভাবমুর্তিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে পুলিশের বহুমুখি সেবা।

পুলিশের মান উন্নয়ন জনতার সাথে পুলিশের দুরুত্ব কমিয়ে আনা সহ বিভিন্ন সামাজিক দায়ীত্ব পালনে ব্যস্ত এই কর্মকর্তার ঝুলিতে আরো একটি মাইল ফলক আজ ৭ই অক্টোবর,২০২১ইং। দেশের সব চেয়ে বড় সমস্যা মাদক এবং মাদককে ঘিরেই পুলিশের নূতন এই উদ্যাগ। ঢাকার কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে ভিতরে চালু হতে যাচ্ছে (ওয়েসিস) নামক একটি  অত্যাধুনিক মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। নিরিবিলি মনমুগ্ধকর ও নান্দনিক পরিবেশে উন্নত ব্যবস্থাপনায় দেশের সবচেয়ে অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র হবে বলে জানিয়েছেন এ মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রটির পরিচালক পুলিশ সুপার ডা: এস এম শহীদুল ইসলাম ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদ উজ্জামান খান, পুলিশের আইজি বেনজির আহমেদ এর উপস্থিতিতে পুলিশের উদ্যোগে গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়।
সম্পূর্ণ অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি আজ ৭ই অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে। ইতি মধ্যেই ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এখন উদ্বোধনের পর্ব শেষ করলো সাততলা বিশিষ্ট ৬০ শয্যার এই আধুনিক মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি।  খোলা থাকবে ২৪ ঘণ্টা। যেখানে ২২টি কক্ষের ১৬টিতে ৪৬টি শয্যা থাকছে পুরুষদের জন্য। এছাড়া বাকি ছয়টি কক্ষে ১৪টি শয্যা থাকছে নারীদের জন্য । এরমধ্যে ডাবল কেবিন ২৮টি, ট্রিপল কেবিন ১৫টি এবং জেনারেল ওয়ার্ডে থাকছে ১১টি বেড। এছাড়া জেনারেল ট্রিপল বেড আছে ছয়টি। জেনারেল ওয়ার্ড ছাড়া সব ওয়ার্ড বা কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
তিনি আরো বলেন ,পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরাময় কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। যা আধুনিক পুলিশের আইকন খ্যাত ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটির ছাদে রয়েছে পরিস্কার পরিছন্ন সবুজ গার্ডেন। যেখানে ছাদ বাগানে প্রাকৃতিক পরিবেশে খোলা আকাশের নিচে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইয়োগা এবং মেডিটেশন করবে রোগীরা। ছাদ বাগানের পাশে রয়েছে ব্যায়ামাগার। ৬ষ্ঠ তলায় আছে নার্সিং স্টেশন। পঞ্চমতলায় আছে বিশেষ কেবিন ও ইনডোর গেমসের ববস্থা। সেখানে আছে টেবিল টেনিসসহ নানা ধরনের খেলার সরঞ্জামাদি। আছে লাইব্রেরি। চতুর্থতলায় রয়েছে ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা, সাধারণ ওয়ার্ড এবং সাধারণ কেবিন। ভবনের তৃতীয়তলায় আছে কেবিন ব্লক, ডাইনিং ও বিশেষ নার্সিং স্টেশন। ভবনের দ্বিতীয় তলা ব্যবহৃত হবে প্রশাসনিক ব্লক হিসেবে। সেখানে থাকছে প্যাথলজি বিভাগও। আছে সাইকোলজি কাউন্সিলিং ও ফ্যামিলি কাউন্সিলিং এবং স্যাম্পল কালেকশন রুম।

তাছাড়া পুলিশের অত্যাধুনিক এই মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে আছে গ্যাস ক্রমোটোগ্রাফি মেডিকেল ইকুইপমেন্ট। এই মেশিনের মাধ্যমে রক্ত ও প্রসাব ছাড়াও চুল থেকে ডোপ টেস্ট করা যাবে। তিন মাস আগে কেউ মাদক সেবন করে থাকলে তা ধরা পড়বে। দেশে প্রথমবারের মতো অত্যাধুনিক এই মেশিনটি স্থাপন করা হচ্ছে এই নিরায় কেন্দ্রে। এর ফলে দ্রুুততম সময়ে শতভাগ নির্ভুল রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই নিরাময় কেন্দ্রের সকল আধূনিক যন্ত্রপাতি আমেরিকা থেকে আনা হচ্ছে এবং সেই আধূনিক ডায়গনস্টিক যন্ত্র পরিচালনার জন্য বিশেষজ্ঞ দল এ দেশে এসে নূন্যতম এক বছর তাদের সেবা প্রদান করবেন। এ ছাড়াও দেশে অন্যন্য নিরাময় কেন্দ্র গুলিও জটিল বিষয় এই প্রতিষ্ঠান থেকে অনায়াসে সহায়তা সেবা গ্রহন করতে পারবে।

মাদক নিরাময়কেন্দ্রে জানালার সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা ঘটনা মাঝে মধ্যে ঘটে। কিন্তু ওয়েসিস মাদক নিরাময় কেন্দ্রের জানালায় রয়েছে স্বচ্ছ কাচ। জানালার গ্রিল হিসেবে দেওয়া হয়েছে শক্ত নেট। যেখানে কোনো কিছু বাঁধার সুযোগ নেই। জানালার পর্দাগুলো লাগানো হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থায়। জোরে টান দিলে নিচে পড়ে যাবে। তাই জানালা বা পর্দা ব্যবহার করে আত্মহত্যার ঝুঁকি থাকছে না। বেশির ভাগ রুমে রয়েছে দুটি করে বেড। তবে ভিআইপি কেউ একা থাকতে চাইলে ওই রুম থেকে একটি বেড অপসারণের সুযোগ রয়েছে।
জানাযায়, মোট ৮৫ জন জনবল সংখ্যা নিয়ে চালু হতে যাচ্ছে এ মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি। এর মধ্যে একজন পরিচালক (এসপি পদমর্যাদার), তিনজন সহকারী পরিচালক, চারজন কো-অর্ডিনেটর এবং ২৭ জন নার্সিং অফিসার বা মেট্রন রয়েছে। এছাড়া হিসাব শাখায় ২ জন, নিরাপত্তা ও রিসিপশন শাখায় ১১ জন, কন্ট্রোল রুমে ছয়জন এবং প্রশাসন শাখায় জনবল আছে আরও ১৪ জন।

এ বিষয় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, পুলিশের আইজি পরামর্শ নিয়ে তিনি সময় উপযোগি এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন,তিনি বলেন, এটি পরিচালিত হবে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে। উন্মুক্ত থাকবে সবার জন্য।তিনি জানান, নিরাময় কেন্দ্রের ভবন নির্মাণে দেশে দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান সহযোগীতা প্রদান করেছেন। তিনি বলেন,কয়ক বছরের মধ্যে মানিকগঞ্জে আরও একটি অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সেখানে ইতোমধ্যে ১০ বিঘা জমি ক্রয় করা হয়েছে। আরও জমি কেনা হবে। ওই কেন্দ্রটিতে সুইমিং পুল এবং গার্ডেনসহ নানা ধরনের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। প্রস্তাবিত কেন্দ্রটি নির্মাণ করতে সময় লাগবে। এজন্য আপাতত কেরানীগঞ্জে প্রকল্পটি শুরু করছি।

ডি আই জি হাবিব সমাজের প্রতিটি ধাপে ধাপে সম্পৃক্ত থেকে নিজেকে মানব সেবায় অনন্য করে তোলাই তার জীবনের ব্রত বলে আমি মনে করছি। তিনি নিজেকে পেশাগত কর্মের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন নি। নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন সাধারণের সেবায়। সমাজ পরিবর্তনে, মানুষের কল্যাণে, মানবতার স্বার্থে পুলিশের কার্যকর ভূমিকায় অবিরাম ব্যতিক্রমী অবদান রেখে চলেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের বেদে ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর অনেকের সামাজিক অবস্থানে পরিবর্তন এসেছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া বেদে সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ও মূলধারায় উঠিয়ে আনতে তিনি অবাক করার মতো কাজ করছেন।

অনেকটা  প্রচার বিমুখ এই পুলিশ কর্মকর্তা দেখিয়ে দিয়েছেন যে পেশাগত কাজের বাইরেও মানুষের জন্য যে অনেক কিছু করা যায়। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টি বেদে, হিজড়া ও যৌন কর্মি সহ সমাজের বঞ্চিত দরিদ্রদের জন্য তিনি অনেক কাজ করেছেন। শিক্ষার উন্নয়নেও তিনি অশেষ অবদান রেখেছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি যা করেছেন এবং করে যাচ্ছেন, তা দেখে যে কোনো শুভবোধসম্পন্ন মানুষ মুগ্ধ হতে বাধ্য। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে কেবল পেশাগত দায়িত্বই শেষ নয়, মানবিক চিন্তা থাকলে সমাজের পিছিয়ে পড়া অসহায় মানুষের জন্য অনেক কিছু করা সম্ভব।কবিতা  নাটক থেকে শুরু করে ইউটিউবেও বিভিন্ন শিক্ষা মূলক কর্মকান্ডে প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও অবদান রাখছেন। তিনি বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সেক্রেটারি এবং এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের সহ সভাপতি ।
ডিআইজি হাবিবুর রহমানের একক প্রচেষ্টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে প্রতিষ্ঠিত হয় পুলিশ মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর, যা এক ঐতিহাসিক স্থাপনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দায়বদ্ধতা থেকেই তার এই মহান উদ্যোগ।
করোনার এই মহাবিপদময় দুর্যোগের সময় সবাই যখন অসহায় অবস্থা পার করছে তখন হাতে গোনা কিছু মানুষ এই মহামারি থেকে যেন মানুষ নিরাপদে থাকে, কিছুটা হলেও মানুষকে যেন স্বস্তিতে রাখা যায় সেই চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। জনগণকে রক্ষায় বলতে গেলে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধ এক প্রকার যুদ্ধই করছেন বাংলাদেশ পুলিশের দুই লক্ষাধিক সদস্য। জনসেবার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের সঠিকভাবে পরিচালনা ও তাদের পরিচর্যার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। করোনা দুর্যোগে অনেক পুলিশ সদস্যকে ডিআইজি হাবিবুর রহমান নিজে মুঠোফোনে কল দিয়েছেন, খোঁজখবর নিয়েছেন, মনোবল বাড়ানোর জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে রাত-দিন কাজ করছেন, পাঠিয়েছেন নানা উপহার সামগ্রী।
তিনি ২০২০ সালের  মাদারীপুর জেলা ‘পুলিশ ব্লাড ব্যাংক’-এর উদ্বোধন করেন । পুলিশ সদস্যরা স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন এবং আজীবন রক্তদানের শপথ করেন।
তাছাড়া গরিব ও অসহায়দের মাঝে, বিশেষ করে বেদে, হিজড়া ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মাঝে ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেছেন বিভিন্ন এলাকায়। দেশের এই কঠিন দুঃসময়ে শত ব্যস্ততার মধ্যেও ভুলে যাননি বেদে সম্প্রদায় এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষদের। যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছেন খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে সুবিধা বঞ্চিতদের কাছে পৌঁছে দিতে।  একই সাথে সুরক্ষার জন্য ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় সাংবাদিকদের দিয়েছেন করোনা সুরক্ষা সরঞ্জাম।  চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল দেখার পরেও তিনি যেভাবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।
একই সময় শুরুতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় বহু পুরোনো যৌনপল্লিতে প্রথমবারের মতো একজন যৌনকর্মীর পুরোপুরি ইসলামী প্রথা মেনে জানাজা পড়িয়ে দাফন করা হয়। পরে চেহলামেরও আয়োজন করা হয়। এসব উদ্যোগের নেতৃত্ব দেন মানবিক পুলিশ হিসেবে সুনাম পাওয়া ডিআইজি হাবিবুর রহমান। এখন নতুনভাবে দৌলতদিয়ার যৌনপল্লির শিশুদের জন্য কাজ শুরু করেছেন তিনি। যৌনপল্লির শত শত শিশুকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন, তাঁর হাতে গড়া ‘উত্তরণ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন।
এখানে মানবতার ফেরীওয়ালা বলে পরিচিত ডি আই জি হাবিবুর রহমানের আরো কিছু সেবা নিয়ে আমার কিছু বিশ্লেষন। যদিও এ সব কর্মকান্ডে তার উর্ধবতন পুলিশ কর্মকর্তাদের মোরাল সাপোর্ট তাঁর প্রতি সব সময় দেখা গেছে।  মানব সেবার পাশাপাশি তিনি পুলিশের মান উন্নয়নে সমপৃক্ত থেকে  গড়ে তুলেছেন,  রাজারবাগে ইতিহাসসমৃদ্ধ অত্যাধুনিক বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়েছিল ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনস। এরপর সারা দেশে সব পুলিশ লাইনসেও একযোগে হামলা চালানো হয়। আর তাই তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল প্রকৃত ইতিহাস জানাতে এবং বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, বীরত্ব, সংগ্রাম ও ত্যাগের মহিমা ধরে রাখতে গড়ে তোলা হয়েছে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে ‘বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ২০০৯ সালে তৎকালীন আইজি নূর মোহাম্মদ (এমপি) ও ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার এ কে এম শহীদুল হকের (সাবেক আইজিপি) সঙ্গে পরামর্শ করে  এই জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা করেন।
১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের আতœত্যাগের ইতিহাস রক্ষিত আছে এই পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে।

ডিআইজি হাবিবুর রহমান এর শিক্ষাজীবন শুরু হয় গোপালগঞ্জের চন্দ্রদীঘলিয়া মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি তার প্রয়াত মা-বাবার নামে বালিকাদের জন্য একটি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের পুলিশ ক্যাডারের জন্য মনোনীত হন। ১৯৯৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ১৭তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি বেশ কয়েকটি স্থানে স্কুল, কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার, গাড়ি চালনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও বুটিক হাউসসহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ও বাল্যবিবাহ রোধে ভূমিকা পালন করেছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর অবদান ও ঢাকায় তাদের প্রথম প্রতিরোধবিষয়ক ঘটনা নিয়ে তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি বই লিখেছেন। সেবা, সহযোগিতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’ লাভ করেন। এ ছাড়া ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)’সহ পুলিশ সপ্তাহ ২০১৭ উপলক্ষে ২০১৬ সালে প্রশংসনীয় ও ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে আইজিপি’স ব্যাজ প্রদান করা হয়। তিনি মোট তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) পেয়েছেন এবং দু’বার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) সেবা পেয়েছেন। তিনি সৌদি আরবের বাদশাহর রয়াল গেস্ট হিসেবে কয়েক বছর আগে পবিত্র হজব্রত পালন করেছেন। পুলিশ সম্পর্কে মানুষের যে কিছুটা নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, তিনি তা পাল্টে দিয়েছেন। পুলিশ কতটা মানবিক, কতটা সহায়ক, কতটা প্রয়োজন, কতটা আন্তরিক এসব দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ শত শত বড় কর্মকর্তা আছেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের পর আর কোনো কাজে তাদের দেখা যায় না। কিন্তু হাবিবুর রহমান পেশাগত দায়িত্ব পালনের শুরুতেই দেশের সাধারণ মানুষের কথা ভেবেছেন, তাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন, এখনও বিরামহীন শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ছড়িয়ে চলেছেন মানবিকতার আলো। যার চলমান সর্ব শেষ নিদর্শন ওয়েসিস নামের মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। বর্তমান তরুণ সমাজের এ রোল মডেল তার দেখানো পথেই চলবে এটা কামনা করি।